পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একটু গায়ে হাত দিয়েই প্রথম দিনের ব্যবস্থা করতেন ক্যাস্টর অয়েল আর উপোস। জল খেতে পেতুম অল্প একটু, সেও গরম জল; তার সঙ্গে এলাচ-দানা চলতে পারত। তিন দিনের দিনই মৌরলা মাছের ঝোল আর গলা ভাত উপোসের পরে ছিল অমৃত।

 জ্বরে ভোগা কাকে বলে মনে পড়ে না। ম্যালেরিয়া ব’লে শব্দটা শোনাই ছিল না। ওয়াক্‌-ধরানো ওষুধের রাজা ছিল ঐ তেলটা, কিন্তু মনে পড়ে না কুইনীন। গায়ে ফোড়া-কাটা ছুরির আঁচড় পড়ে নি কোনোদিন। হাম বা জলবসন্ত কাকে বলে আজ পর্যন্ত জানি নে। শরীরটা ছিল একগুঁয়ে রকমের ভালো।

 মায়েরা যদি ছেলেদের শরীর এতটা নিরুগী রাখতে চান যাতে মাস্টারের হাত এড়াতে না পারে, তা হলে ব্রজেশ্বরের মতো চাকর খুঁজে বের করবেন। খাবার-খরচার সঙ্গে সঙ্গেই সে বাঁচাবে ডাক্তার-খরচা; বিশেষ করে এই কলের জাঁতার ময়দা আর এই ভেজাল-দেওয়া ঘি-তেলের দিনে। একটা কথা মনে রাখা দরকার, তখনো বাজারে চকোলেট দেখা দেয় নি। ছিল এক পয়সা দামের গোলাপি-রেউড়ি। গোলাপি-গন্ধের-আমেজ-দেওয়া এই তিলে ঢাকা চিনির ড্যালা আজও ছেলেদের পকেট চট্‌চটে করে তোলে কি না জানি নে; নিশ্চয়ই এখনকার মানী লোকের ঘর থেকে লজ্জায় দৌড় মেরেছে। সেই ভাজা মসলার ঠোঙা গেল কোথায়? আর সেই সস্তা দামের তিলে গজা? সে কি এখনো টিঁকে আছে? না থাকে তো তাকে ফিরিয়ে আনার দরকার নেই।

 ব্রজেশ্বরের কাছে সন্ধেবেলায় দিনে দিনে শুনেছি কৃত্তিবাসের সাতকাণ্ড রামায়ণটা। সেই পড়ার মাঝে মাঝে এসে পড়ত কিশোরী

২১