পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হাতে দিচ্ছেন ছােটো একটি ক’রে তােড়া। নাটকের থেকে কুলীন মেয়ের ফুঁপিয়ে কান্না কখনাে কখনাে কানে আসে, তার মর্ম বুঝতে পারি নে। বােঝবার ইচ্ছেটা হয় প্রবল। খবর পেতুম, যিনি কাঁদতেন তিনি কুলীন বটে, কিন্তু তিনি আমার ভগ্নীপতি। তখনকার পরিবারে যেমন মেয়ে আর পুরুষ ছিল দুই সীমানায় দুই দিকে, তেমনি ছিল ছােটোরা আর বড়ােরা। বৈঠকখানায় ঝাড়-লণ্ঠনের আলােয় চলছে নাচগান; গুড়গুড়ি টানছেন বড়াের দল; মেয়েরা লুকোনাে থাকতেন ঝরােখার ও পারে চাপা আলােয় পানের বাটা নিয়ে— সেখানে বাইরের মেয়েরা এসে জমতেন, ফিস্ ফিস্ ক’রে চলত গেরস্তালির খবর। ছেলেরা তখন বিছানায়। পিয়ারী কিংবা শংকরী গল্প শােনাচ্ছে, কানে আসছে—

‘জোচ্ছনায় যেন ফুল ফুটেছে’...


আমাদের সময়কার কিছু পূর্বে ধনী-ঘরে ছিল শখের যাত্রার চলন। মিহি-গলা-ওয়ালা ছেলেদের বাছাই করে নিয়ে দল বাঁধার ধুম ছিল। আমাদের মেজকাকা ছিলেন এইরকম একটি শখের দলের দলপতি। পালারচনা করবার শক্তি ছিল তাঁর, ছেলেদের তৈরি করে তােলবার উৎসাহ ছিল। ধনীদের ঘরপােষা এই যেমন শখের যাত্রা তেমনি ব্যাবসাদারী যাত্রা নিয়েও বাংলাদেশের ছিল ভারি নেশা। এ পাড়ায়, ও পাড়ায়, এক-একজন নামজাদা অধিকারীর অধীনে যাত্রার দল গজিয়ে উঠত। দলকর্তা অধিকারীরা সবাই যে জাতে বড়াে কিংবা

২৫