পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বেহারাগুলাের হাঁই-হুই হাঁই-হুই, গা করছে ছম্ ছম্। ধূ ধূ করে মাঠ, বাতাস কাঁপে রােদ দুরে। দূরে ঝিক্ ঝিক্ করে কালীদিঘির জল, চিক্ চিক্ করে বালি। ডাঙার উপর থেকে ঝুঁকে পড়েছে ফাটলধরা ঘাটের দিকে ডালপালা-ছড়ানাে পাকুড় গাছ।

 গল্পের আতঙ্ক জমা হয়ে আছে না-জানা মাঠের গাছতলায় ঘন বেতের ঝােপে। যত এগােচ্ছি, দুর্ দুর্ করছে বুক। বাঁশের লাঠির আগা দুই-একটা দেখা যায় ঝােপের উপর দিকে। কাঁধ বদল করবে বেহারাগুলাে ঐখানে। জল খাবে, ভিজে গামছা জড়াবে মাথায়। তার পরে?—

‘রে রে রে রে রে রে!’


সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পড়াশুনাের জাঁতাকল চলছেই ঘর্ঘর শব্দে। এই কলে দম দেওয়ার কাজ ছিল আমার সেজদাদা হেমেন্দ্রনাথের হাতে। তিনি ছিলেন কড়া শাসনকর্তা। তম্বুরার তারে অত্যন্ত বেশি টান দিতে গেলে পটাঙ ক’রে যায় ছিড়ে। তিনি আমাদের মনে যতটা বেশি মাল বােঝাই করতে চেয়েছিলেন তার অনেকটাই ডিঙি উল্টিয়ে তলিয়ে গেছে, এ কথা এখন আর লুকিয়ে রাখা চলবে না। আমার বিদ্যেটা লােকসানি মাল।

 সেজদাদা তাঁর বড়াে মেয়েকে শিখিয়ে তুলতে লেগেছিলেন। যথাসময়ে তাকে দিয়েছিলেন লােরেটোতে ভর্তি করে। তার পূর্বেই তার ভাষায় প্রথম দখল হয়ে গেছে বাংলায়।

৩১