পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চশমা, ঝুঁকে প’ড়ে কাপড় সেলাই করছে, মাঝে মাঝে সময় হলে নমাজ পড়ে নিচ্ছে— চেয়ে দেখি আর ভাবি, কী সুখেই আছে নেয়ামৎ। অঙ্ক কষতে মাথা যখন ঘুলিয়ে যায়, চোখের উপর শ্লেট আড়াল করে নীচের দিকে তাকিয়ে দেখি, দেউড়ির সামনে চন্দ্রভান লম্বা দাড়ি কাঠের কাঁকই দিয়ে আঁচড়িয়ে তুলছে দুই কানের উপর দুই ভাগে। পাশে বসে আছে কাঁকন-পরা ছিপ্‌ছিপে ছোকরা দরায়ান, কুটছে তামাক। ঐখানে ঘোড়াটা সক্কালেই খেয়ে গেছে বালতিতে বরাদ্দ দানা, কাকগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে ঠোকরাচ্ছে ছিটিয়ে-পড়া ছোলা, জনি কুকুরটার কর্তব্যবোধ জেগে ওঠে— ঘেউ ঘেউ করে দেয় তাড়া।

 বারান্দায় এক কোণে ঝাঁট দিয়ে জমা করা ধুলোর মধ্যে পুঁতেছিলুম আতার বিচি। কবে তার থেকে কচি পাতা বেরোবে দেখবার জন্যে মন ছট্‌ফট করছে। নীলকমল মাস্টার উঠে গেলেই ছুটে গিয়ে তাকে দেখে আসা চাই, আর দেওয়া চাই জল। শেষ পর্যন্ত আমার আশা মেটে নি। যে ঝাঁটা একদিন ধুলো জমিয়েছিল সেই ঝাঁটাই দিয়েছিল ধুলো উড়িয়ে।

 সূর্য উপরে উঠে যায়, অর্ধেক আঙিনায় হেলে পড়ে ছায়া। ন’টা বাজে। বেঁটে কালো গোবিন্দ কাঁধে হলদে রঙের ময়লা গামছা ঝুলিয়ে আমাকে নিয়ে যায় স্নান করাতে। সাড়ে ন’টা বাজতেই রোজকার বরাদ্দ ডাল, ভাত, মাছের ঝোলের বাঁধা ভোজ। রুচি হয় না খেতে।

 ঘণ্টা বাজে দশটার। বড়ো রাস্তা থেকে মন-উদাস-করা ডাক শোনা যায় কাঁচা-আম-ওয়ালার। বাসনওয়ালা ঠং ঠং আওয়াজ দিয়ে

৩৯