পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তখনকার কালের সঙ্গে এখনকার কালের তফাত ঘটেছে এ কথা স্পষ্ট বুঝতে পারি, যখন দেখতে পাই আজকাল বাড়ির ছাদে না আছে মানুষের আনাগোনা, না আছে ভূতপ্রেতের। পূর্বেই জানিয়েছি অত্যন্ত বেশি লেখাপড়ার আবহাওয়ায় টিঁকতে না পেরে ব্রহ্মদৈত্য দিয়েছে দৌড়। ছাদের কার্নিশে তার আরামের পা রাখবার গুজব উঠে গিয়ে সেখানে এঁঠো আমের আঁঠি নিয়ে কাকেদের চলেছে ছেঁড়াছেঁড়ি। এ দিকে মানুষের বসতি আটক পড়েছে নীচের তলায় চারকোণা দেওয়ালের প্যাক্‌বাক্সে।

 মনে পড়ে বাড়ি-ভিতরের পাঁচিল-ঘেরা ছাদ। মা বসেছেন সন্ধেবেলায় মাদুর পেতে, তাঁর সঙ্গিনীরা চার দিকে ঘিরে বসে গল্প করছে। সেই গল্পে খাঁটি খবরের দরকার ছিল না। দরকার কেবল সময় কাটানো। তখনকার দিনের সময় ভর্তি করবার জন্যে নানা দামের নানা মাল-মসলার বরাদ্দ ছিল না। দিন ছিল না ঠাসবুনুনিকরা, ছিল বড়ো-বড়ো-ফাঁক-ওয়ালা জালের মতো। পুরুষদের মজলিশেই হোক, আর মেয়েদের আসরেই হোক, গল্পগুজব হাসিতামাসা ছিল খুবই হাল্কা দামের। মায়ের সঙ্গিনীদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তি ছিলেন ব্রজ আচার্জির বোন, যাঁকে আচার্জিনী বলে ডাকা হ’ত। তিনি ছিলেন এ বৈঠকে দৈনিক খবর সরবরাহ করবার কাজে। প্রায় আনতেন রাজ্যির বিদ্‌কুটে খবর কুড়িয়ে কিংবা বানিয়ে। তাই নিয়ে গ্রহশাস্তি-স্বস্ত্যয়নের হিসেব হ’ত খুব ফলাও খরচার। এই সভায় আমি মাঝে মাঝে টাটকা পুঁথি-পড়া বিদ্যের আমদানি করেছি; শুনিয়েছি সূর্য পৃথিবীর থেকে ন কোটি মাইল দূরে।

৪১