পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু তখন এত নতুন ছিল যে মেপে দেখলে তার থই পাওয়া যায় না। তারও অনেককাল আগে, আমি তখন শিশু, মেজদাদা সিভিলিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছেন। বােম্বাইয়ে প্রথম তাঁর কাজে যােগ দিতে যাবার সময় বাইরের লােকদের অবাক করে দিয়ে তাদের চোখের সামনে দিয়ে বউঠাকরুনকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। বাড়ির বউকে পরিবারের মধ্যে না রেখে দূর বিদেশে নিয়ে যাওয়া এই তাে ছিল যথেষ্ট, তার উপরে যাবার পথে ঢাকাঢাকি নেই— এ যে হল বিষম বেদস্তুর। আপন লোকদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।

 বাইরে বেরােবার মতাে কাপড় তখনাে মেয়েদের মধ্যে চলতি হয় নি। এখন শাড়ি জামা নিয়ে যে সাজের চলন হয়েছে, তারই প্রথম শুরু করেছিলেন বউঠাকরুন।

 বেণী দুলিয়ে তখনাে ফ্রক ধরে নি ছােটো মেয়েরা— অন্তত আমাদের বাড়িতে। ছােটোদের মধ্যে চলন ছিল পেশােয়াজের। বেথুন ইস্কুল যখন প্রথম খােলা হল, আমার বড়দিদির ছিল অল্প বয়স। সেখানে মেয়েদের পড়াশােনার পথ সহজ করবার প্রথম দলের ছিলেন তিনি! ধব্‌ধবে তাঁর রঙ। এ দেশে তাঁর তুলনা পাওয়া যেত না। শুনেছি পাল্কিতে করে স্কুলে যাবার সময় পেশােয়াজ-পরা তাঁকে চুরি করা ইংরেজ মেয়ে মনে করে পুলিসে একবার ধরেছিল।

 আগেই বলেছি সেকালে বড়াে-ছোটোর মধ্যে চলাচলের সাঁকোটা ছিল না। কিন্তু এই-সকল পুরােনাে কায়দার ভিড়ের মধ্যে জ্যোতিদাদা এসেছিলেন নির্জলা নতুন মন নিয়ে। আমি ছিলুম তাঁর চেয়ে বারাে বছরের ছােটো। বয়সের এত দূর থেকে আমি যে তাঁর চোখে পড়তুম, এই আশ্চর্য। আরাে আশ্চর্য এই যে, তাঁর সঙ্গে আলাপে

৫০