পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১১

খাঁচায় পাখি পোেষার শখ তখন ঘরে ঘরে ছিল। সব চেয়ে খারাপ লাগত পাড়ায় কোনো বাড়ি থেকে পিঁজরেতে বাঁধা কোকিলের ডাক। বউঠাকরুন জোগাড় করেছিলেন চীনদেশের এক শ্যামা পাখি। কাপড়ের ঢাকার ভিতর থেকে তার শিষ উঠত ফোয়ারার মতো। আরো ছিল নানা জাতের পাখি, তাদের খাঁচাগুলো ঝুলত পশ্চিমের বারান্দায়। রোজ সকালে একজন পোকাওয়ালা পাখিদের খাবার জোগাত। তার ঝুলি থেকে বেরোত ফড়িঙ, ছাতুখোর পাখিদের জন্যে ছাতু।

 জ্যোতিদাদা আমার সকল তর্কের জবাব দিতেন। কিন্তু মেয়েদের কাছে এতটা আশা করা যায় না। একবার বউঠাকরুনের মর্জি হয়েছিল খাঁচায় কাঠবিড়ালি পোষা। আমি বলেছিলুম কাজটা অন্যায় হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন গুরুমশায়গিরি করতে হবে না। একে ঠিক জবাব বলা চলে না। কাজেই কথা কাটাকাটির বদলে লুকিয়ে দুটি প্রাণীকে ছেড়ে দিতে হল। তার পরেও কিছু কথা শুনেছিলুম, কোনো জবাব করি নি।

 আমাদের মধ্যে একটা বাঁধা ঝগড়া ছিল, কোনোদিন যার শেষ হল না। সে কথা বলছি।—

 উমেশ ছিল চালাক লোক। বিলিতি দর্জির দোকান থেকে যতসব ছাঁটাকাটা নানা রঙের রেশমের ফালি জলের দরে কিনে আনত, তার সঙ্গে নেটের টুকরো আর খেলো লেস মিলিয়ে মেয়েদের জামা বানানো হ’ত। কাগজের প্যাকেট খুলে সাবধানে মেলে ধরত মেয়েদের চোখে; বলত এই হচ্ছে আজকের দিনের ফ্যাশন। ঐ

৫৩