পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মন্ত্রটার টান মেয়েরা সামলাতে পারত না। আমাকে কী দুঃখ দিত বলতে পারি নে। বার বার অস্থির হয়ে আপত্তি জানিয়েছি। জবাবে শুনেছি— জ্যাঠামি করতে হবে না। আমি বউঠাকরুনকে জানিয়েছি এর চেয়ে অনেক ভালাে, অনেক ভদ্র, সেকেলে সাদা কালাপেড়ে শাড়ি কিংবা ঢাকাই।— আমি ভাবি, আজকালকার জর্জেট-জড়ানাে বউদিদিদের রঙ-করা পুতুল-গড়া রূপ দেখে দেওরদের মুখে কি কোনাে কথা সরছে না। উমেশের-সেলাই-করা ঢাকনি-পরা বউঠাকরুন যে ছিলেন ভালাে। চেহারার উপর এত বেশি জালিয়াতি তখন ছিল না।

 তর্কে বউঠাকরুনের কাছে বরাবর হেরেছি, কেননা তিনি তর্কের জবাব দিতেন না। আর হেরেছি দাবাখেলায়, সে খেলায় তাঁর হাত ছিল পাকা।


 জ্যোতিদাদার কথা যখন উঠে পড়েছে তখন তাঁকে ভালো করে চিনিয়ে দিতে আরাে কিছু বলার দরকার হবে। শুরু করতে হবে আরাে একটু আগেকার দিনে।

 জমিদারির কাজ দেখতে প্রায় তাঁকে যেতে হ’ত শিলাইদহে। একবার যখন সেই দরকারে বেরিয়েছিলেন, আমাকেও নিয়েছিলেন সঙ্গে। তখনকার পক্ষে ওটা ছিল বেদস্তুর, অর্থাৎ যাকে লােকে বলতে পারত ‘বাড়াবাড়ি হচ্ছে’। তিনি নিশ্চয় ভেবেছিলেন— ঘর থেকে এই বাইরে চলাচল এ একটা চলতি ক্লাসের মতাে। তিনি বুঝে নিয়েছিলেন আমার ছিল আকাশে বাতাসে চরে-বেড়ানাে মন, সেখান থেকে আমি খােরাক পাই আপনা হতেই। তার কিছুকাল

৫৪