থেকে দেখা যেত সাবরমতী নদী হাঁটুজল লুটিয়ে নিয়ে এঁকেবেঁকে চলেছে বালির মধ্যে। চাতালটার কোথাও কোথাও চৌবাচ্ছার পাথরের গাঁথনিতে যেন খবর জমা হয়ে আছে বেগমদের স্নানের আমিরিআনার।
কলকাতায় আমরা মানুষ; সেখানে ইতিহাসের মাথা তোলা চেহারা কোথাও দেখি নি। আমাদের চাহনি খুব কাছের দিকের বেঁটে সময়টাতেই বাঁধা। আমেদাবাদে এসে এই প্রথম দেখলুম চলতি ইতিহাস থেমে গিয়েছে, দেখা যাচ্ছে তার পিছন-ফেরা বড়ো ঘরোআনা। তার সাবেক দিনগুলো যেন যক্ষের ধনের মতো মাটির নীচে পোঁতা। আমার মনের মধ্যে প্রথম আভাস দিয়েছিল ক্ষুধিতপাষাণের গল্পের।—
সে আজ কত শত বৎসরের কথা। নহবৎখানায় বাজছে। রোশনচৌকি দিনরাত্রে অষ্ট প্রহরের রাগিণীতে; রাস্তায় তালে তালে ঘোড়র ক্ষুরের শব্দ উঠছে; ঘোড়সওয়ার তুর্কি ফৌজের চলছে কুচ্কাওয়াজ, তাদের বর্শার ফলায় রোদ উঠছে ঝক্ঝকিয়ে। বাদশাহি দরবারের চার দিকে চলেছে সর্বনেশে কানাকানি ফুস্ফাস্। অন্দরমহলে খোলা তলোয়ার হাতে হাবসি খোজারা পাহারা দিচ্ছে। বেগমদের হামামে ছুটছে গোলাব-জলের ফোয়ারা, উঠছে বাজুবন্ধ-কাঁকনের ঝন্ঝনি। আজ স্থির দাঁড়িয়ে শাহিবাগ ভুলে-যাওয়া গল্পের মতো; তার চার দিকে কোথাও নেই সেই রঙ, নেই সেইসব ধ্বনি— শুকনো দিন, রস-ফুরিয়ে-যাওয়া রাত্রি।
পুরোনো ইতিহাস ছিল তার হাড়গুলো বের ক’রে; তার মাথার খুলিটা আছে, মুকুট নেই। তার উপরে খোলস মুখোশ পরিয়ে