পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বালক

বয়স তখন ছিল কাঁচা— হাল্কা দেহখানা
ছিল পাখির মতাে, শুধু ছিল না তার ডানা।
উড়ত পাশের ছাদের থেকে পায়রাগুলাের ঝাঁক,
বারান্দাটার রেলিঙ-’পরে ডাকত এসে কাক।
ফেরিওয়ালা হেঁকে যেত গলির ও পার থেকে
তপসি মাছের ঝুড়িখানা গামছা দিয়ে ঢেকে।
বেহালাটা হেলিয়ে কাঁধে ছাদের ’পরে দাদা,
সন্ধ্যাতারার সুরে যেন সুর হ’ত তাঁর সাধা।
জুটেছি বউদিদির কাছে ইংরেজি-পাঠ ছেড়ে,
মুখখানিতে ঘের-দেওয়া তাঁর শাড়িটি লাল-পেড়ে।
চুরি করে চাবির গােছা লুকিয়ে ফুলের টবে
স্নেহের রাগে রাগিয়ে দিতেম নানান উপদ্রবে।
কিশােরী চাটুজ্জে হঠাৎ জুটত সন্ধ্যা হলে—
বাঁ হাতে তার থেলাে হুঁকো, চাদর কাঁধে ঝােলে।
দ্রুত লয়ে আউড়ে যেত লবকুশের ছড়া—
থাক্‌ত আমার খাতা লেখা, প’ড়ে থাকত পড়া;
মনে মনে ইচ্ছা হ’ত, যদি কোনাে ছলে
ভর্‌তি হওয়া সহজ হ’ত এই পাঁচালির দলে,
ভাব্‌না মাথায় চাপত নাকো ক্লাসে ওঠার দায়ে,
গান শুনিয়ে চলে যেতুম নতুন নতুন গাঁয়ে।