পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দুইদিন পরে বুধবারের দিন লইয়া যাইবেন। অপু দু-একবার ভাবিল লীলার প্রস্তাবটা একবার মায়ের কাছে তোলে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কথাটা আর কাৰ্যে পরিণত হইল না । সকালের রৌদ্র ফুটিয়া উঠিবার সঙ্গে সঙ্গেই উলা স্টেশনে গাড়ি আসিয়া দাড়াইল। এখান হইতে মনসাপোত যাইবার সুবিধা। অবতারণ চক্রবর্তী পূর্ব হইতেই পত্ৰ দিয়া গরুর গাড়ির ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছিলেন। কাল রাত্রে একটু কষ্ট হইয়াছিল। এক্সপ্রেস ট্রেনখানা দেরিতে পৌছানোর জন্য ব্যাণ্ডেল হইতে নৈহাটির গাড়িখানা পাওয়া যায় নাই। ফলে বেশী রাত্রে নৈহাটিতে আসিয়া অনেকক্ষণ বাসিয়া থাকিতে হইয়াছিল। ঘারারাত্ৰি জাগরণের ফলে অপু কখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। সে জানে না। চক্রবর্তী মহাশয়ের ডাকে উঠিয়া জানালা দিয়া মুখ বাড়াইয়া দেখিল একটা স্টেশনের প্লাটফর্মে গাড়ি লাগিয়াছে। সেখানেই তাদের নামিতে হইবে। কুলীর ইতিমধ্যে তাহদের কিছু জিনিসপত্র নামাইয়াছে । গরুর গাড়ীতে উঠিয়া চক্রবর্তী মহাশয় অনবরত তামাক টানিতে লাগিলেন । বয়স সত্তরের কাছাকাছি হইবে, একহারা পাতলা cচহারা, মুখে দাড়ি গোফ নাই, মাথার চুল সব পাকা। বলিলেনজয়া, ঘুম পাচ্ছে না তো ? সর্বজয়া হাসিয়া বলিল, আমি তো নৈহাটিতে ঘুমিয়ে নিইচ আধঘণ্টা অপু ও ঘুমিয়েচে । আপনারই ঘুম হয় নি চক্রবর্তী মহাশয় খুব খানিকটা কাশিয়া লইয়া বলিলেন,-ওঃ, সোজা খোজটা করেচি তোদের । অ্যার-বছর বোশেখে মেয়েটা গেল মারা, হরিধান তো তার আগেই। এই বয়সে হাত পুড়িয়ে রোধেও খেতে হয়েচে,-কেউ নেই সংসারে । তাই ভাবলাম হরিহর বাবাজীর তো নিশ্চিন্দিপুর থেকে উঠে যাবার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন থেকেই, যাই এখানেই নিয়ে আসি একটু ধানের জমি আছে, গৃহদেবতার সেবাটাও হবে । গ্রামে ব্ৰাহ্মণ তেমন নেই,—আর