পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ওকে সে কথা এখন বললাম পণ্ডিতমশাই । জিজ্ঞেস করাচি আরও পড়বে তো ? তৃতীয় পণ্ডিত বলিলেন, পড়বে না, বাঃ।। হীরের টুকরো ছেলে, স্কুলের নাম রেখেছে। ওরা যদি না পড়ে তো পড়বে কে, কেষ্ট তেলির বেটা গোবর্ধন ? কিছু না, আপনি ইন্সপেক্টর অফিসে লিখে দিন যে, ও হাই স্কুলে পড়বে ওর আবার জিজ্ঞেসটা কি ?-ওঃ, সোজা। পরিশ্রম করিচি মশাই ওকে ভগ্নাংশটা শেখাতে ? প্রথমটা অপু যেন ভাল করিয়া কথাটা বুঝিতে পারিল না। পরে যখন বুঝিল তখন তাহার মুখে কথা যোগাইল না। হেডমাস্টার একখানা কাগজ বাহির করিয়া তাহার সামনে ধরিয়া বলিলেনএইখানে একটা নাম সই ক’রে দাও তো । আমি কিন্তু লিখে দিলাম যে, তুমি হাইস্কুলে পড়বে। আজই ইন্সপেক্টর অফিসে পাঠিয়ে দেবো । মাসখানেক পরে বৃত্তি পাওয়ার খবর, কাগজে পাওয়া গেল । যাইবার পূর্বদিন বৈকালে সর্বজয়া ব্যস্তভাবে ছেলের জিনিসপত্র গুছাইয়া দিতে লাগিল । ছেলে কখনও এক বিদেশে বাহির হয় নাই নিতান্ত আনাড়ী, ছেলে-মানুষ ছেলে । কত জিনিসের দরকার হইবে, কে থাকিবে তখন সেখানে যে মুখে মুখে সব অভাব যোগাইয়া ফিরিবে, সব জিনিস হাতে লইয়া বসিয়া থাকিবে ? খুটিনাটিএকখানা কঁথা পাতিবার, একখানি গায়ের-একটি জল খাইবার গ্লাস ঘরের তৈরী এক শিশি সরের ঘি, এক পুটুলি নারিকেল নাড়ু অপু ফুলকাটা একটা মাঝারি জামবাটিতে দুধ খাইতে ভালবাসেসেই বাটিটা, ছোট একটা ধোন্তলে মাখিবার চৈ-মিশানো নারিকেল তৈল, আরও কত কি ! অপুর মাথার বালিশের পুরানো ওয়াড় বদলাইয়া নূতন ওয়াড় পরাইয়া দিল। দধি-যাত্রায় আবশ্যকীয় দই একটা ছোট পাথরবাটিতে পাতিয়া রাখিল । ছেলেকে কি করিয়া বিদেশে চলিতে হইবে সে বিষয়ে সহস্র উপদেশ দিয়াও তাহার মনে তৃপ্তি হইতেছিল না। ভাবিয়া দেখিয়া যেটি বাদ দিয়াছে মনে হয় সেটি তখনি আবার ডাকিয়া বলিয়া দিতেছিল। ܘ ܓ