পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

টাকা কয়টি পকেটে করিয়া সেখান হইতে বাহির হইয়া অপু আকাশ-পাতাল ভাবিতে ভাবিতে ফুটপাথ বাহিয়া চলিল। সুরেশ্বরের মেসে সে জিনিসপত্র রাখিয়া দিয়াছে, সেইখানেই গেষ্ট-চার্জ দিয়া খায়, রাত্রে মেসের বারান্দাতে শুইয়া থাকে। টাকা যাহা আছে, মেসের দেন মিটাইতে যাইবে । সামান্য কিছু হাতে থাকিতে পারে বটে, কিন্তু তাহার পর ? সুরেশ্বরের মেসে আসিয়া নিজের নামের একখানি পত্র ডাকবাক্সে দেখিল । হাতের লেখাটা সে চেনে না-খুলিয়া দেখিল চিঠিখানা মায়ের, কিন্তু অপরের হাতের লেখা। হাতে ব্যথা হইয়া মা বড় কষ্ট পাইতেছেন, অপু কি তিনটি টাকা পাঠাইয়া দিতে পারে ? মা কখনো কিছু চান না, মুখ বুজিয়া সকল দুঃখ সহ্য করেন, সে-ই বরং দেওয়ানপুরে থাকিতে নানা ছল-ছুতায় মাঝে মাঝে কত টাকা মায়ের কাছ হইতে লইয়াছে। হাতে না থাকিলেও তেলিবাড়ি হইতে চাহিয়া-চিন্তিয়া মা যোগাড় করিয়া দিতেন। খুব কষ্ট না হইলে কখনো মা তাহাকে টাকার জন্য লেখেন নাই । পকেট হইতে টাকা বাহির করিয়া গুণিয়া দেখিল সাতাশটি টাকা আছে। মেসের দেনা সাড়ে পনেরো টাকা বাদে সাড়ে এগারো টাকা থাকে। মাকে কত টাকা পাঠানো যায় ? মনে মনে ভাবিল তিনটে টাকা তো চেয়েছেন, আমি দশ টাকা পাঠিয়ে দিই, মনিঅৰ্ডার পিওন যখন টাকা নিয়ে যাবে, মা ভাববেন, বুঝি তিন টাকা কিংবা হয়তো দু’টাকার মনিঅৰ্ডার-জিজ্ঞেস করবেন, কত টাকা ? পিওন যেই বলবে দশ টাকা, মা অবাক হয়ে যাবেন। মাকে তাক লাগিয়ে দেবো ভারি মজা, বাড়িতে গেলে মা শুধু সেই গল্পই করবেন। দিনরাত অপ্ৰত্যাশিত টাকা প্ৰাপ্তিতে মায়ের আনন্দোজ্জল মুখখান কল্পনা করিয়া অপু ভারী খুশী হইল। বৌবাজার পোস্টাফিস হইতে টাকাটা পাঠাইয়া দিয়া সে ভাবিলে- বেশ হ’ল ! আহা, মাকে কেউ কখনো দশ টাকার মনিঅৰ্ডার এক সঙ্গে পাঠায় নি-টাকা পেয়ে খুশী 8S