পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কোথায় সে এখন পায় একটা শ্বেত পাথরের গেলাস ? রাত্রে একবার তাহার মনে হইল সে বাড়ি ছাড়িয়া পালাইয়া যাইবে । কলিকাতা কোন দিকে ? সে বাবার কাছে চলিয়া যাইবে কলিকাতায়-কাল বৈকালের পূর্বেই। কিন্তু রাত্ৰে পালানো হইল না । নানা দুঃস্বপ্ন দেখিয়া সে সকালে ঘুম ভাঙিয়া উঠিল, দুই-তিন বার কাঠের সিন্দুকটার পিছনে সন্তৰ্পণে উকি মারিয়া “দেখিল, গোলাসের টুকরাগুলা সেখানে হইতে কেত বাহির করিয়াছে কিনা । বড় মামীমার সামনে আর যায় না, পাছে গেলাসটা কোথায় জিজ্ঞাসা করিয়া বসে। দুপুরের কিছু পর বাড়ির রাস্তা দিয়া কে একজন সাইকেল চড়িয়া যাইতেছে দেখিয়া সে নাট-মন্দিরের বেড়ার কাছে ছুটিয়া দেখিতে গোল-কিন্তু সাইকেল দেখা তাহার হইল না, নদীর বঁাধাঘাটে একখানা কাহাদের ডিঙি-নৌকা লাগিয়াছে, একজন ফর্সা চেহারার লোক একটি ছড়ি ও ধ্যাগ তাতে ডিঙি হইতে নামিয়া ঘাটের সিড়িতে পা দিয়া মাঝির সঙ্গে কথা কহিতেছে-কাজল অবাক হইয়া ভাবিতেছে, লোকটা কে, এমন সময় লোকটা মাঝির সঙ্গে কথা শেষ করিয়া এদিকে মুখ ফিৰাইল । সঙ্গে সঙ্গে কাজল অল্পক্ষণের জন্য চোখে যেন ধোয়া দেখিল, পরীক্ষণেই সে নাটমন্দিরের বেড়া গলাইয়া বাহিরের নদীর ধারের রাস্তাটা বাহিয়া বঁধাঘাটের দিকে ছুটিল। যদিও অনেক বছর পরে দেখা। তবুও কাজল চিনিয়াছে লোকটিকে --তাহার বাবা । অপু খুলনার ষ্টীমার ফেল করিয়াছে। নতুবা সে কাল রাত্রেই এখানে পৌছিত । সে মাঝিদের জিজ্ঞাসা করিতেছিল, পরশু ভোরে নৌকা এখানে অসিয়া তাহাকে বরিশালের স্ট্রীমার ধরাইয়া দিতে পরিবে কিনা । কথা শেষ করিয়াই ফিরিয়া চাহিয়া সে দেখিল একটি ছোট সুশ্ৰী বালক ঘাটের দিকে দৌড়িয়া আসিতেছে। পরীক্ষণেই সে চিনিল। আজ সারা পথ, নৌকায় সে ছেলের কথা ভাবিয়াছে, না জানি সে কত বড় হইয়াছে, কেমন দেখিতে হইয়াছে, তাহাকে ভুলিয়া গিয়াছে, না মনে রাখিয়াছে! ছেলের আগেকার 9ܢ