পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তঁহাদের মানসিক ধারা যে-পথ অবলম্বনে চলে অপুর পথ তা নয়র্তাহীদের মূর্খতা, সংস্কার, সীমাবদ্ধতা ও সর্বারকমের মানসিক দৈন্য অপুকে পীড়া দেয়। খানিকক্ষণ মিষ্টালাপ হয়তো এদের সঙ্গে চলিতে পারে। --কিন্তু বেশীক্ষণ অ্যাডা দেওয়া অসম্ভব-বরং কারখানার ননী মিস্ত্রী, কি চাপদানীর বিশু স্যা করার অ্যাডার লোকজনকে ভালই লাগিত—কারণ তাহারা যে জগৎটাতে বাস করিত-অপুর কাছে সেটা একেবারেই অপরিচিত।--তা তাদের মোহ ছিল, সেই অজানা ও অপরিচয়ের মোহ, কাশীর কথকঠাকুর কি অমরকন্টকের আজবলাল ঝা-কে যে কারণে ভাল লাগিয়াছিল । কিন্তু এরা সে ধরনের অনন্যসাধারণ নয়। নিতান্তই সাধারণ ও নিতান্ত ক্ষুদ্র । কাজেই বেশীক্ষণ থাকি লেই হাঁপ ধরে। অপুর নতুন ঘরটাতে দরজা জানালা কম, দক্ষিণ দিকের ছোট জানালাটা খুলিলে পাশের বাড়ির ইট-বার-করা দেওয়ালটা দেখা যায় মাত্র। ভাবিল—তবুও তো একা থাকতে পারব।--লেখাটা হবে । বাড়ি বদল করার দিনটা জিনিসপত্র সরাইতে ও ঘর গুছাইতে সন্ধা হইয়া গেল। হাত-পা ধুইয়া ঠাণ্ডা হইয়। বসিল । আজ রবিবার ছেলে-পড়ানো নাই। বাপ ! নিশ্বাস ফেলিয়া বঁচিল । সেই অতটুকু ঘর, কয়লার ধোয়া আর রাজ্যের প্যাকবাক্সের টপিন তেলের মত গন্ধ । আজ কয়েক দিন হইল কাজলের একখানা চিঠি পাইয়াছে, এই প্ৰথম চিঠি, কাটাকুটি বানান ভুলে ভর্তি | আর একবার পত্ৰখানা বাহির করিয়া পড়িল-বার-পনেরো হইল। এইবার লইয়া । বাবার জন্য তাহার মন কেমন করে, একবার যাইতে লিখিয়াছে, একখানা আরব্য উপন্যাস ও একটা লণ্ঠন লইয়া যাইতে লিখিয়াছে, যেন বেশী দেরী না হয়। অপু ভাবে, ছেলেটা পাগল, লণ্ঠন কি হবে ? লণ্ঠন ? দ্যাখ তো কাণ্ড । উঠিয়া ঘরে আলো জ্বালিয়া ছেলের পত্রের জবাব লিখিল । সে আগামী শনিবার তাহাকে দেখিতে যাইতেছে। সোম ও মঙ্গলবার ছুটি, ট্রেনে স্ট্রীমারে GS