পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার কথা কিছু বলবো না। আগে-আগে তোমার কথা বলে । তোমার মা ভাল আছেন ? তুমিও তো পড়ো-না ? —আমি এবারে মাইনর ক্লাসে উঠবো-পরে একটু গর্বিত মুখে বলিল, আর বছর ফাস্ট হয়ে ক্লাসে উঠেচি, প্ৰাইজ দিয়েচে । লীলা অপুর দিকে চাহিল। বেলা তিনটার কম নয়। এত বেলায় সে খাইতে বসিয়াছে ? বিস্ময়ের সুরে বলিল, এখন খেতে বসেচ, এ ত বেলায় ? অপুর লজ্জা হইল। সে সকালে সরকারদের ঘরে বসিয়া খাঈয়া স্কুলে যায়-- শুধু ডাম-ভাত,-"তাও শ্ৰীকণ্ঠ ঠাকুর বেগার-শোধ ভাবে দিয়া যায়, খাইয়া পেট ভরে না, স্কুলেই ক্ষুধা পায়, সেখান হইতে ফিরিয়া মায়ের পাতে ভাত ঢাকা থাকে, বৈকালে তাহাই খায় । আমাজ ছুটির দিন বলিয়া সকালেই মায়ের পাতে খাইতে বসিয়াছে। অপু ভাল করিয়া উত্তর দিতে পারিল না বটে, কিন্তু লীলা ব্যাপারটা কতক না বুঝিল এমন নহে। ঘরের হীন আসবাব পত্র, অপুর হীন বেশ-অবেলায় নিরুপকরণ দু'টি ভাত সাগ্রহে খাওয়া-- লীলার কেমন যেন মনে বড় বিঁধিল । সে কোন কথা বলল না । অপু বলিল, তোমার সব বই এনেচ। এখেনে ? দেখাতে হবে আমাকে । ভাল গল্প কি ছবির বই নেই ? লীলা বলিল, তোমার জন্যে কিনে এনেচি আসিবার সময় । তুমি গল্পের বই ভালোবাসে ব’লে একখানা ‘সাগরের কথা” এনেচি, আর দু-তিনখানা এনেচি । আনচি, তুমি খেয়ে ওঠে । অপুর খাওয়া প্রায় শেষ হইয়াছিল, খুশিতে বাকিটা কোনো রকমে শেষ করিয়া উঠিয়া পড়িল । লীলা লক্ষ্য করিয়া দেখিল সে পাতের সবটা এমন করিয়া খাইতেছে, পাতে একটা দানাও পড়িয়া নাই। সঙ্গে সঙ্গে তাহার উপর লীলার কেমন একটা অপূর্ব মনের ভাব হইল-সে ধরণের অনুভূতি লীলার জীবনে এই প্ৰথম, আর কাহারও সম্পর্কে সে ধরনের কিছু তো কখনও হয় নাই । একটু পরে লীলা অনেক বই আনিল। অপুর মনে হইল, লীলা