পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাজল এই কয়মাসেই বেশ লেখাপড়া শিখিয়াছে। বাড়িতেই পড়ে -অনেক সময় নিজের বই রাখিয়া বাবার বইগুলির পাতা উল্টাইয়া দেখে। আজকাল বাবা কি কাজে সর্বদাই বাহিরে বাহিরে ঘুরিয়া বেড়ায়, এইজন্য বাবার কাজও সে অনেক করে । এই সময়ে অপুর হঠাৎ অসুখ হইল। সকালে অন্য দিনের মত আর বিছানা হইতে উঠিতেই পারিল না-বাবা সকালে উঠিয়া মাদুর পাতিয়া বসিয়া তামাক খায় কাজলের মনে হয় সব ঠিক আছে —কিন্তু আজ বোলা দশটা বাজিল, বাবা এখনও শুইয়া-জগৎটা আর যে স্থিতিশীল নয়, নিত্য নয়—সব কি যেন হইয়া গিয়াছে। সেই রোদ উঠিয়াছে, কিন্তু রোদের চেহারা অন্য রকম, গলিটার চেহারা অন্য রকম, কিছু ভাল লাগে না, বাবার অসুখ এই প্ৰথম, বাবাকে আর কখনো সে অসুস্থ দেখে নাই-কাজলের ক্ষুদ্র জগতে সব যেন ওলট-পালট হইয়া গেল । সারা দিনটা কাটিল, বাবার সাড়া নাই, সংজ্ঞা নাই, জ্বরে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া । কাজল পাউরুটি কিনিয়া আনিয়া খাইল । সন্ধ্য। কাটিয়া গেল। কাজল পরমানন্দ পানওয়ালার দোকান হইতে তেল পুরিয়া আনিয়া লণ্ঠন জ্বালিল। বাবা তখনও সেই রকমই শুইয়া। কাজল অস্থির হইয়া উঠিল—তাহার কোনও অভিজ্ঞতা নাই কি এখন সে করে ? দু-একবার বাবার কাছে গিয়া ডাকিল, জ্বরের ঘোরে বাবা একবার বলিয়া উঠিল-স্টোেভটা নিয়ে আয়, ধরাই খোকা-স্টোভটা অর্থাৎ সে স্টোভটা ধরাইয়া কাজলকে রাধিয়া দিবে। কাজল ভাবিল, বাবাও তো সারাদিন কিছু খায় নাই—স্টোভ ধরাইয়া বাবাকে সাবু তৈরী করিয়া দিবে। কিন্তু স্টোভ সে ধরাইতে জানে না, কি করে এখন ? সেটাভটা ঘরের মেঝেতে লইয়া দেখিল তেল নাই । আবার পরমানন্দের দোকানো গেল । পরমানন্দকে সব কথা খুলিয়া বলিল। পাশেই একজন নতুন পাশকরা হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের ডিম্পেন্সারী। ডাক্তারটি একেবারে নতুন, এক ԳS