পাতা:ছোটদের অপরাজিত - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একদিন কাজল বসিয়া পড়িতেছে, সে ঘরে ঢুকিয়া হাত দু’খানা পিছনের দিকে লুকাইয়া বলিল,--খোকা বল তো হাতে কি ?-- কথাটা বলিয়াই মনে পড়িয়া গেল, শৈশবে একদিন তাহাঁর বাবাসেও এমনি বৈকাল বেলাটা-তাহার বাবা এইভাবেই, ঠিক এই কথা বলিয়াই খবরের কাগজের মোড়কটা তাহার হাতে দিয়াছিল ! জীবনের চক্ৰ ঘূরিয়া ঘুরিয়া কি অদ্ভুত ভাবেই আবর্তিত হইতেছে, চিরযুগ ধারিয়া ! কাজল ছুটিয়া গিয়া বলিল,-কি বাবা দেখি ?-- পরে বাবার হাত ঠাইতে জিনিষটা লইয়া দেখিয়া বিস্মিত ও পুলকিত হইয়া উঠিল । অজস্র ছাৰ ওয়াল আরব্য উপন্যাস । দাদামশায়ের বইয়ে তো এত রঙীন ছবি ছিল না ? নাকের কাছে ধরিয়া দেখিল কিন্তু তেমন পুৱানো গন্ধ নাই, সেই এক অভাব। অনেকদিন পরে হাতে পয়সা হওয়াতে সে নিজের জন্যও একরাশ বই ও ইংরেজী ম্যাগাজিন কিনিয়া আনিয়াছে। পরদিন সে বৈকালে তাহার এক সাহেব বন্ধুর নিকট হইতে একখানা চিঠি পাইয়া গ্রেট ইস্টাৰ্ণ হোটেলে তাহার সঙ্গে দেখা করিতে গেল । সাহেবের বাড়ি কানাডায়, চল্লিশ-বিয়াল্লিশ বয়স, নাম এ্যাশবার্টন। হিমালয়ের জঙ্গলে গাছপালা খুজিতে আসিয়াছে, ছবিও আঁকে। ভারতবর্ষে এই দুইবার আসিল । স্টেটুস ম্যানে তাহার লেখা হিমালয়ের উচ্ছসিত বৰ্ণনা পড়িয়া অপু হোটেলে গিয়া মাস-দুই পূর্বে লোকটির সঙ্গে আলাপ করে। এই দু-মাসের মধ্যে দু-জনের বন্ধুত্ব খুব জমিয়া উঠিয়াছে। সাহেব তাহার জন্য অপেক্ষা করিতেছিল। ফ্রানেলের ঢ়িলা সুJট পরা, মুখে পাইপ, খুব দীর্ঘাকার, সুশ্ৰী মুখ, নীল চোখ, কপালের উপরের দিকের চুল খানিকটা উঠিয়া গিয়াছে। অপুকে দেখিয়া হাসিমুখে আগাইয়া আসিল, বলিল-দেখ, কাল একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছিল । ও-রকম কোনদিন হয় নি। কাল একজন বন্ধুর সঙ্গে মোটরে কলকাতার বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলুম। একটা জায়গায় গিয়ে বসেছি, কাছে একটা পুকুর, ও-পারে একটা মন্দির, ro