পাতা:জগতের ইতিবৃত্ত.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ ৭৬ ] এইরূপে আমেরিকার তুমুল বিশ্লেষ-সমর উপস্থিত হইল। এই যুদ্ধ ১৮৬১ হইতে ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। উভয় পক্ষেরই সৈন্য ইংরাজবংশীয় ছিল ; এবং উভয় পক্ষই বিপুল শক্তি ও ঐশ্বৰ্য্য প্রভাবে অসংখ্য সৈন্য রণক্ষেত্রে অৰতারিত করতে সমর্থ হইয়াছিল। এক সময়ে উত্তর প্রদেশ সকলের সৈন্যসংখ্যা পাঁচ লক্ষ ছিল। উত্তরপ্রদেশবাসীরা কতিপয় ভীষণ সংগ্রামে পরাজিত হইল বটে, কিন্তু অবশেষে তাহারা দক্ষিণ প্রদেশ সকলকে জয় করিয়া বলপূৰ্ব্বক তাহাদিগকে সাধারণ যোগে পুনরানয়ন করিল। কিন্তু এই মহাযুদ্ধের ব্যয়ে উত্তরপ্রদেশগুলি দরিদ্র হইয়া পড়ে এবং তাছাদিগকে বাণিজ্যজাহাজ পৰ্য্যস্ত বিক্রয় করিতে হয়। ইংরাজেরাই এই সকল জাহাজের অধিকাংশ ক্রয় করেন । এই যুদ্ধের পূৰ্ব্বে আমেরিকার অনেক জাহাজ কলিকাতায় আসিত, কিন্তু ইহার পর অতি অপসংখ্যক আমেরিকান্‌ জাহাজকে কলিকাতায় আসিতে দেখা যায় । আমেরিকার এই যুদ্ধ হইতে একটা মহৎ উপকার সংসাধিত হইয়াছে। দক্ষিণ প্রদেশগুলিতে দাসত্বপ্রথা প্রচলিত ছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশবাসীরা দক্ষিণ প্রদেশসকল জয় করিয়া দাসত্বপ্রথা একবারে উঠাইয়া দিল ; সুতরাং লক্ষ ২ নিগ্রো এককালে দাসত্বশৃঙ্খল হইতে উন্মুক্ত হইল। এক্ষণে ইংরাজের পৃথিবীর সর্বত্রই দাসত্বপ্রথা পরিত্যাগ করিয়াছেন। স্পেনীয় ও পর্তুগীজ উপনিবেশ সকলেই কেবল এই প্রথা দেখিতে পাওয়া যায়। ইংরাজদিগের রাজ্যে লোকে ঋণ পরিশোধার্থে আপনাকে বিক্রয়, এবং অন্যের ভৃত্যভাবে যাবজ্জীবন কাৰ্য্য করিতে স্বীকার, করিতে পারে বটে, কিন্তু আইন দ্বারা কোন ব্যক্তিকে এইরূপ স্বীকার পরিপূরণে বাধ্য করিতে পারা যায় না । ইংরাজী আইন অনুসারে লোকে অতি অপকালের জন্য আপনাদিগকে ভূত্যভাবে বিক্রয় করিতে পারে বটে, কিন্তু এ স্থলেও প্রভুর ভূতাদিগের প্রতি যথেচ্ছব্যবহার করিতে পারেন না । কোন কুলী আসাম, কাছাড় বা মরিশসে কিছুকাল কাৰ্য্য করিবে বলিয়া আপনাকে বিক্রয় করিতে পারে বটে, কিন্তু এরূপ করিতে হইলে কোন রাজকীয় কৰ্ম্মচারীর সম্মতি লইতে হয় । নিৰ্দ্ধারিত সময় অতীত হইলে তাহারা পুনৰ্ব্বার স্বাধীনতা প্রাপ্ত হয়, এবং ইচ্ছ করিলে পুনৰ্ব্বার পূর্ববৎ কাৰ্য্য করিতে স্বীকৃত হইতে পারে। ইংরাজদিগের অধিকার মধ্যে যাহাতে কোন প্রকার দাসত্বপ্রথা প্রচলিত না থাকে তদ্বিষয়ে ব্যবস্থাপকের বিশেষ দৃষ্টি রাখেন। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় এই যে উত্তম ২ বিধি সকলও সময়ে ২ কাৰ্য্যকর হয় না ।