পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১২৭

 শঙ্কর বলিল, ক্রিকেট খেলতে এসেছি মাসিমা, এখানকার স্কুলের সঙ্গে আমাদের স্কুলের ম্যাচ।

 শ্যামা, বিধান, মণি সকলেই শঙ্করকে দেখিয়া খুসি হইয়াছে। অভিমান করিয়াছে বকুল। পূজোর সময় আসব বলে এখন বাবু এলেন, বলিয়া সে মুখ ভার করিয়া আছে। কবে শঙ্কর বকুলের কাছে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল পূজোর সময় সে বনগাঁ আসিবে। সে খবর কেহ রাখিত না, বকুলের কথায় বড়রা হাসে, শঙ্কর শ্যামার দিকে চাহিয়া সলজ্জ ভাবে কৈফিয়ৎ দিয়া বলে, পূজোর সময় মধুপুর গেলাম যে আমরা!—তোকে চিঠি লিখিনি বিধান সেখান থেকে?

 বকুল অর্ধেক ক্ষমা করিয়া বলে, তোমার জিনিসপত্র কই?

 শঙ্কর বলে, বোর্ডিংএ আমাদের থাকতে দিয়েছে, সেখানে রেখেছি।

 বকুল বলে, বোর্ডিং কি জন্যে, আমাদের বাড়ি থাক না?

 শঙ্কর মুখ নিচু করিয়া একটু হাসে। শ্যামা তাকায় মন্দার দিকে। শঙ্করকে এখানে থাকার নিমন্ত্রণ জানায় কিন্তু সুপ্রভা! প্রথমে শঙ্কর রাজি হয় না, ভদ্রতার ফাঁকা ওজর করে। কলিকাতার ছেলে সে, ওসব কায়দা তার দুরস্ত। শেষে সুপ্রভার হাসি ও মিষ্টি কথার কাছে পরাজয় মানিয়া সে আতিথ্য স্বীকার করে। লজ্জার যে আবরণটি লইয়া সে এ-বাড়িতে ঢুকিয়াছিল ক্রমে ক্রমে তাহা খসিয়া যায়, কানু ও কালুর সঙ্গে তাহার ভাব হয়, বিধানের পড়ার ঘরে খানিক হৈ-চৈ করিয়া উঠানে তাহারা মার্বেল খেলে, তারপর স্কুলের বেলা হইলে সকলে স্নান করিতে যায় পুকুরে। শ্যামা বারণ করিয়া বলে, সাঁতার জান না, তুমি পুকুরে যেও না শঙ্কর। জল তুলে এনে দিক, তুমি ঘরে স্নান কর।

 শঙ্কর বলিয়া যায়, বেশি জলে যাব না মাসিমা।

 তবু শ্যামার বড় ভয় করে। বিধান, বকুল, মণি এরা সাঁতার শিখিয়াছে, কালু ও কানু তো পাকা সাঁতার, পুকুরের জল তোলপাড় করিয়া ওরা স্নান করিবে; উৎসাহের মাথায় শঙ্করের কি খেয়াল থাকিবে সে সাঁতার জানে না? বাড়ির একজন চাকরকে সে পুকুরে পাঠাইয়া দেয়। খানিক পরে হৈ-চৈ