পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৩১

আবার আশা করিতে পারে, ধূসর ভবিষ্যতে আবার রঙের ছাপ লাগিতে থাকে। নাইবা রহিল তাহার স্বামীর নিকট আশা ভরসা, একদিন ছেলে তাহাকে সুখী করিবে।

 কেবল, পড়িয়া পড়িয়া বিধান রোগা হইয়া যাইতেছে, এত ও রাত জাগিয়া পড়ে। যেমন পরিশ্রম করে তেমন খাওয়া ছেলেটা পায় না। পরের বাড়িতে কেইবা হিসাব করে যে একটা ছেলে দিবাবাত্রি খাটিতেছে, একটু ওর ভালমত খাওয়া পাওয়া দরকার, দুধ ঘির প্রয়োজন ওর সবচেয়ে বেশি? শ্যামা কি করিবে? চাহিয়া চিন্তিয়া চুরি করিয়া যতটা পারে ভাল জিনিস বিধানকে খাওয়ায়, কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করিতে সাহস পায় না। এ আশ্রয় ঘুচিয়া গেলে তার তো উপায় থাকিবে না।

 মন্দা যখন চেঁচামেচি করিতে থাকে: একি কাণ্ড বাবা এ বাড়ির, ভূতের বাড়ি নাকি এটা, সন্দেশ করে পাথরের বাটি ভরে রাখলাম, বাটি অর্ধেক হ’ল কি করে? এ কাজ মানুষের, বড় মানুষের, বিড়েলেও নেয় নি, ছেলেপিলেও খায়নি—নিয়ে দিব্যি আবার থাপরে থুপরে সমান করে রাখার বুদ্ধি ছেলেপিলের হবে নাঃ—শ্যামার বুকের মধ্যে তখন ঢিপ ঢিপ করে। অর্ধেক? অর্ধেক তো সে নেয় নাই। যৎসামান্য নিয়াছে। মন্দা টের পাইল কেমন করিয়া?

 সুপ্রভা বলে, অমন করে বোলো না দিদি, লক্ষ্মী—যে নিয়েছে খাবার জিনিস নিয়েছে তো, বড় লজ্জা পাবে দিদি।

 মন্দা বলে তুই অবাক করলি বোন, চোর লজ্জা পাবে বলে বলতে পারব না চুরির কথা?

 সুপ্রভা মিনতি করিয়া বলে, বলে আর লাভ কি দিদি? এবার থেকে সাবধানে রেখো।

 তবু শ্যামা পরিশ্রমী সন্তানের জন্য খাদ্য চুরি করে। দুধ জ্বাল দিতে গিয়া সুযোগ পাইলেই দুধে সরে খানিকটা লুকাইয়া ফ্যালে, দুধ গরম করিলে সর তো যায় গলিয়া, টের পাইবে কে? রাঁধিতে রাঁধিতে দু’খানা মাছভাজা শ্যামা শালপাতায় জড়াইয়া কাপড়ের আড়ালে গোপন করে, ঘরে গিয়া কখন সে তাহা লুকাইয়া আসে কে জানিবে? এমনি সব ছোট ছোট