পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৪৩

বলাই ভাল মনে করিয়াছিল। কিছুই হয় তো নয়। হয় তো নির্জন ঢেঁকি ঘরে শঙ্করের কাছে বসিয়া থাকার জন্যই বকুল লজ্জা পাইয়াছিল, ওখানে ও ভাবে বসিয়া থাকা যে তার উচিত হয় নাই বকুল কি আর তা বোঝে না।

 তারপর যে কদিন শঙ্কর এখানে ছিল, আর তিনটি দিন মাত্র, বকুলকে শ্যামা একদণ্ডের জন্য চোখের আড়াল করে নাই।

 বকুল রাগ করিয়া বলিয়াছিল, সারাদিন পেছন পেছন ঘুরছ কেন বলত?

 বকুলের বোধ হয় অপমান বোধ হইয়াছিল।

 শ্যামা বলিয়াছিল, পেছন পেছন আবার তোর ঘুরলাম কখন?

 তারপর বকুল কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল। গিয়া বসিয়া ছিল শীতলের কাছে, সারাটা দিন।

 দুমাস পরে বৈশাখ মাসে বকুলের বিবাহ হইয়াছিল। ছেলের নাম মোহিনী, ছেলের বাপের নাম বিভূতি, নিবাস কৃষ্ণনগর। বিভূতি ছিল পোষ্টমাষ্টার, এখন অবসর লইয়াছে। মোহিনী পঞ্চাশ টাকায় ঢুকিয়াছে পোষ্টাপিসে, আশা আছে বাপের মত সেও পোস্টমাষ্টার হইয়া অবসর লইতে পারিবে। মোহিনী কাজ করে কলিকাতায়, থাকে কাকার বাড়ি, যার নাম শ্রীপতি এবং যিনি মার্চেণ্ট আপিসের কেরাণী।

 ছেলেটি ভাল, আমাদের বকুলের বর মোহিনী। শান্ত নম্র স্বভাব। পঞ্চাশ টাকার চাকরী করে বলিয়া এতটুকু গর্ব নাই, প্রায় শঙ্করের মতই লাজুক। দেখিতে মন্দ নয়, রঙ একটু ময়লা কিন্তু কি চোখ।—বকুলের চোখের মতই বড় হইবে।

 জামাই দেখিয়া শ্যামা খুসী হইয়াছে, সকলেই হইয়াছে। জামাইএর বাপখুড়ার ব্যবহারেও কারো অখুসী হওয়ার কারণ ঘটে নাই, শ্বশুর বাড়ি হইতে বকুল ফিরিয়া আসিলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া জানা গিয়াছে শাশুড়ী ননদেরাও বকুলের মন্দ নয়, বকুলকে তারা পছন্দও করিয়াছে, আদর যত্ন মিষ্টি কথারও কমতি রাখে নাই, কেবল এক পিস্‌শাশুড়ী আছে বকুলের, সেই যা রুঢ় কথা বলিয়াছে দু'একটা—বলিয়াছে, ধেড়ে মাগী, বলিয়াছে তালগাছ। ধোয়া পাকা মেঝেতে পা পিছলাইয়া পড়িয়া গিয়া বকুল