পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০
জননী

আছে। এখন ছেলেকে বিবাহের কথা বলিতে গিয়া কি হিতে বিপরীত হইবে? যে রহস্যময় প্রকৃতি তাহার পাগল ছেলের, কিছুদিন এখন চুপচাপ থাকাই ভাল।

 মোহিনী বলে, বিধানবাবুর অমত হবে না মা, আপনি মেয়ে দেখুন।

 মোহিনীর বলার ভঙ্গিতে শ্যামা অবাক হইয়া যায়। এত জোর গলায় মোহিনী কি করিয়া ঘোষণা করিতেছে বিধানের অমত হইবে না? বিধানের মন সে জানিল কিসে?

 তারপর মোহিনী কথাটা পরিষ্কার করিয়া দেয়। বলে যে ক'দিন আগে বিধান গিয়াছিল তাহার কাছে, বিবাহের ইচ্ছা জানাইয়া আসিয়াছে।

 যেচে বিয়ে করতে চান শুনে প্রথমটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম মা, তারপর ভেবে দেখলাম কি জানেন,—আপনার শরীর ভাল নয়, কাজকর্ম করতে কষ্ট হয় আপনার। ভেবে চিন্তে তাই সম্মত হয়েছেন। ওসব কিছু বললেন না অবিশ্যি, বলবার মানুষ তো নন্,—

 শ্যামা জানে না। পড়া ছাড়িয়া বিধান একদিন হঠাৎ চাকুরি গ্রহণ করিয়াছিল, আজ বিবাহে মত দিয়াছে। সেদিন অভাবে অনটনে শ্যামা পাগল হইতে বসিয়াছিল, আজ সংসারের কাজ করিতে তাহার কষ্ট হইতেছে। সেবার বিধান ত্যাগ করিয়াছিল বড় হওয়ার কামনা, এবার ত্যাগ করিয়াছে মত। শুধু মত হয়ত নয়। মত আর শামুর স্মৃতি হয়ত আজও একাকার হইয়া আছে ছেলের মনে।

 তা হোক, ছেলেরা এমনি ভাবেই বিবাহে মত দিয়া থাকে, মায়ের জন্য। নহিলে স্বপন দেখিবার বয়সে কেহ কি সাধ করিয়া বিবাহের ফাঁদে পড়িতে চায়। তারপর সব ঠিক হইয়া যায়। বৌএর দিকে টান পড়িলে তখন আর মনেও থাকে না কিসের উপলক্ষে বৌ আসিয়াছে, কার জন্য। চোখের জলের মধ্যে শ্যামা হাসে। খুঁজিয়া পাতিয়া ছেলের জন্য বৌ সে আনিবে পরীর মত রূপসী, মার জন্য বিবাহ করিতে হইয়াছিল বলিয়া দুদিন পরে আর আপশোষ থাকিবে না ছেলের—মনে থাকিবে না শামুকে।

 শ্যামার মনে আবার উৎসাহ ভরিয়া আসিল। জীবনে কাজ তো এখনো তার কম নয়! আনন্দ উৎসবের পথ তো খোলা কম নয়। এত সে শ্রান্ত হইয়া