পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮২
জননী

 শ্যামা যেন আকাশ হইতে পড়িল।

 কার পছন্দ হল না, তোমার?

 আমার পছন্দ হয়েছে। বিধানবাবুর পছন্দ নয়।

 পছন্দ নয়? ওই মেয়ে পছন্দ নয় বিধানের? বাংলাদেশ খুঁজিলে আর অমন মেয়ে পাওয়া যাইবে? বিধান বলে কি? 

 কেন পছন্দ হল না খোকা?

 বিধান বলিল, দূর, ওটা মানুষ নাকি? ফুঁ দিলে মটকে যাবে।

 না, শামুকে ছেলে আজও ভোলে নাই। শামুর নিটোল গড়ন, শামুর চপল চঞ্চল চলা-ফেরা, শামুর নির্লজ্জ দুরন্তপনা আজও ছেলের দৃষ্টিকে ঘেরিয়া রহিয়াছে, আর কোনো মেয়েকে তার পছন্দ হইবে না। শ্যামার মুখে বিষাদ নামিয়া আসে। ফুঁ দিলে মটকাইয়া যাইবে? মেয়েমানুষ আবার ফুঁ দিলে মটকায় নাকি! শামুর মত সবল দেহ থাকে কটা মেয়ের? থাকা ভালও নয়। কাঠ কাঠ দেখায়, পাকা পাকা দেখায়, অসময়ে সর্বাঙ্গে যৌবন আসিলে কি বিসদৃশ দেখায় মেয়েমানুষকে, বিধান তার কি জানে? ও যে ধ্যান করিতেছে শামুর, শামুর দুরন্ত সুঠাম দেহটা যে চোখের সামনে ভাসিয়া বেড়াইতেছে ওর।

 লজ্জায় দুঃখে ছেলের মুখের দিকে শ্যামা চাহিতে পারে না। রূপ ও সুষমাই যথেষ্ট নয়, ছেলে তার যৌবন চায়। দেহ অপরিপুষ্ট হইলে ছবির মত সুন্দরী মেয়েও ওর পছন্দ হইবে না। ছি, একি রুচি বিধানের? ওরকম বৌ আসিলে শ্যামা তো তাকে ভালবাসিতে পারিবে না!

 আবার মেয়ে খোঁজা হইতে লাগিল। মেয়ে খুঁজিতে খুঁজিতে কাবার হইয়া গেল মাঘ মাস।

 ফাল্গুনের গোড়ায় শীত কমিয়া গেল। সঙ্গে সঙ্গে শ্যামা সতেজে সুস্থ হইয়া উঠিল।

 ফাল্গুনের শেষের দিকে বাগবাজারের উকিল হারাধন বাবুর মা-হারা মেয়েটার সঙ্গে বিধানের বিবাহ হইয়া গেল। মেয়ের নাম সুবর্ণলতা।

 শ্যামা যা ভাবিয়াছিল তাই। মস্ত ধাড়ি মেয়ে, যৌবনের জোয়ার নয়, একেবারে বান ডাকিয়াছে! রঙ মন্দ নয়, মুখ চোখ মন্দ নয়, কিন্তু শ্যামার