পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৯

একাই নামিয়া গিয়াছিল। কানু ও কালু তখন নিশ্চিন্ত মনে রসগােল্লা খাইতেছে।

 শীতল বলিয়াছিল, গাড়ি ছাড়ার সময় হ'ল, ওদের নামিয়ে নাও হে রাখাল।

 রাখাল বলিয়াছিল, যাক্ না যাক্, মামাবাড়ি থেকে ক'দিন বেড়িয়ে আসুক।

 মন্দা বলিয়াছিল, ওরাও যাবে যে দাদা। উনি টিকিট কেটেছেন, এই নাও।

 শ্যামাকে ব্যাপারটা বলিবার সময় মন্দা এই সংক্ষিপ্ত কথােপকথনটুকু উদ্ধৃত করিতেও ছাড়ে নাই, বলিয়াছে, দাদা কিছু টের পায় নি বৌ, ভেবেছিল শাশুড়ী বুঝি সত্যি সত্যি শেষে মত দিয়েছে। ফিরে গেলে যা কাণ্ডটা হবে! পেটের ছেলে চুরি করার জন্যে আমায় না শেষে জেলে দেয়।

 এদিক দিয়া শ্যামার বরাবর সুবিধা ছিল, স্বামীর জননীর খেয়াল মত কখনাে তাহাকে পুতুল নাচ নাচিতে হয় নাই। তবু, মাঝে মাঝে শাশুড়ীর অভাবে তাহার কি কম ক্ষোভ হইয়াছে! আর কিছু না হােক, বিপদে আপদে মুখ চাহিয়া ভরসা করিবার সুযোগ তাে সে পাইত। মন্দা কোন দায়িত্ব গ্রহণ করে না, কেবল কাজ চালাইয়া দেয়। সেবার যে শ্যামার ছেলে মরিয়া গেল সে যদি কাহারো দোষে গিয়া থাকে অপরাধিনী শ্যামা, মন্দার কোন ত্রুটি ছিল না। কিন্তু শাশুড়ী থাকিলে তিনিই সকল দায়িত্ব গ্রহণ করিতেন, শুধু আঁতুড়ে তাহাকে এবং বাহিরে তাহার সংসারকে সাহায্য করিয়া ক্ষান্ত না থাকিয়া ছেলেকে বাঁচাইয়া রাখার ভারও থাকিত তাঁহারই। যে সব ব্যবস্থার দোষে ছেলে তাহার মরিয়া গিয়াছিল সে তাহা বুঝিতে না পারুক শাশুড়ীর অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে অবশ্যই ধরা পড়িত। তা ছাড়া, স্বামীর মা তাে পর নয় যে ছেলেকে সব দিক দিয়া ঘেরিয়া থাকিলে তাহাকে কোন মায়ের হিংসা করা চলে! মন্দাকে শ্যামা সমর্থন করিতে পারে না।

 বলে, ওদের না আনলেই ভাল করতে ঠাকুরঝি!

 মন্দা বলে, ভাল দিয়ে আমার কাজ নেই বাবু—সে ডাইনি মাগীর ভাল। আদর দিয়ে দিয়ে মাথা খাচ্ছেন আর দিনরাত জপাচ্ছেন আমাকে ঘেন্না