পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
২১

 একটি দুটির কথা নয় ঠাকুরঝি। নিজে ছেলেমেয়ে মানুষ করতে গেলে ও একটিই থাক আর দুটিই থাক ফিটফাট থাকা আর পােষায় না। মেয়ে এই এটা করছে এই ওটা করছে—নােংরামির চূড়ান্ত, তার সঙ্গে কি এসেন্স মানায়? মেয়ে একটু বড় হলে হয়ত আবার সুরু করব। তা করব ঠাকুরঝি, এ বয়সে কি আর বুড়ি হয়ে থাকব সত্যি সত্যি!

 শ্যামা বলে, মেয়ে বড় হতে হতে আর একটি আসবে যে!

 বিষ্ণুপ্রিয়া জোর দিয়া বলে, না, আর আসবে না।

 মন্দা খিলখিল করিয়া হাসে: বললেন বটে একটা হাসির কথা! এখনি রেহাই পাবেন? আরও কত আসবে, ভগবান দিলে কারাে সাধ্যি আছে ঠেকিয়ে রাখে!

 শ্যামা বলে, ঠাকুরঝি আপনাকে জব্দ করে দিলে।

 বিষ্ণুপ্রিয়া বলে, আমাকে জব্দ করা আর শক্ত কি?

 যে বিষ্ণুপ্রিয়ার এমনি পরিবর্তন হইয়াছে একদিন সকালে সে শ্যামাকে দেখিতে আসিল। মেয়েকে সে সঙ্গে আনিল না। মেয়েকে সঙ্গে করিয়া বিষ্ণুপ্রিয়া কোথাও যায় না, কারাে বাড়ি মেয়েকে যাইতেও দেয় না, ঘরের কোণে লুকাইয়া রাখে। বাড়ির পুরানাে ঝি ছাড়া আর কারাে কোলে সে মেয়েকে যাইতে দেয় না। মেয়ের সম্বন্ধে তাহার একটা সন্দেহজনক গােপনতা আছে, পাড়ার মেয়েরা এমনি একটা আভাস পাইয়া কৌতুহলী হইয়া উঠিয়াছিল। তারপর সকলেই জানিয়াছে। জানিয়াছে যে বিষ্ণুপ্রিয়ার মেয়ে পৃথিবীতে আসিয়াছে পাপের ছাপ লইয়া, মহিম তালুকদার ভীষণ পাপী।

 এবার বিষ্ণুপ্রিয়াকে কার্পেটের আসনটাতেই বসিতে দেওয়া হইল। মন্দা ভদ্রতা করিয়া জিজ্ঞাসাও করিল, আপনাকে এক কাপ চা করে দি ল?

 চা? বিষ্ণুপ্রিয়া চা খায় না।

 খান না? মন্দা সুন্দর অবাক হইতে জানে, কি আশ্চর্যি!-তা, চা আমার মেজননদও খায় না। তার বিয়ে হয়েছে চিলপাহাড়ীর জমিদার বাড়ি, মস্তু বড়লােক তারা, চালচলন সব সাহেবি। বিয়ের আগে আমার ননদ খুব চা খেত, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ছেড়ে দিলে। বললে, চা খেলে গায়ের চামড়া কর্কশ হয়। আমার মেজননদ খুব সুন্দরী কিনা, রঙ প্রায় গিয়ে