পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৩৩

বিকালে দেখিতে আসা স্থির করে? ছেলেকে ফেলিয়া রাখি শ্যামা সদর দরজা গিয়া পথের দিকে তাকায়। রণীকে দেখিতে পাইলে ডাকিয়া ফিরাইয়া একটি কাগজে হারান ডাক্তারকে কয়েকটি কথা লিখিয়া দিবে। রাণীকে সে দেখিতে পায় না। শুধু পাড়ার ছেলে বিনু ছাড়া পথে কেহ নাই।

 শ্যামা ডাকে, অ বিনু, অ ভাই বিনু, শুনছ?

 কি?

 খােকাব বড্ড জ্বর হয়েছে ভাই। কেমন অজ্ঞানের মত হয়ে গেছে, লক্ষ্মী দাদাটি একবার ছুটে হারান ডাক্তারকে গিয়ে বল গে—

 আমি পারব না। বিনু বলে। শ্যামা বলে, ও ভাই বিনু শােন ভাই একবার—

 বাড়াবাড়ি সে উতলা হইয়াছে? ঘরে গিয়া শ্যামা কাঁদে। দেখাে ছেলে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলিতেছে। চোখ বুজিয়া নিশ্বাস ফেলিতেছে। ওকি আর চোখ মেলিবে?

 হারান ডাক্তার দেরি না করিয়াই আসিল। হারান যত মন্থর হােক তার পুরানাে নড়বড়ে ফোর্ড গাড়িটা এখনাে ঘণ্টায় বিশ মাইল যাইতে পারে। ভাত খাইয়া সে ধীরে ধীরে পান চিবাইতেছিল। ঘরে ঢুকিয়া সে প্রথমে চিকিৎসা করিল শ্যমার। বলিল, কেঁদো না বাছা। রোগ নির্ণয় হবে না।

 কেমন তাহার রোগ নির্ণয় কে জানে। খােকার গায়ে একবার হাত দিয়াই হুকুম দিল, এক গামলা ঠাণ্ডা জল কলসী থেকে এনাে।

শ্যামা গামলায় জল আনিলে হারান ডাক্তার ধীরে ধীরে খােকাকে তুলিয়া গলা পর্যন্ত জলে ডুবাইয়া দিল। এক হাতে সেই অবস্থায় তাহাকে ধরিয়া রাখিয়া অন্য হাতে ভিজাইয়া দিতে লাগিল তাহার মাথা। খােকাব মার অনুমতি চাহিল না, এরকম বিপজ্জনক চিকিৎসার কোন কৈফিয়ৎও দিল না।

 শ্যামা বলিল, একি করলেন?

 হারান ডাক্তার বলিল, শুকনো তােয়ালে থাকলে দাও। না থাকলে শুকনাে কাপড়েও চলবে।

 শ্যামা বিষ্ণুপ্রিয়াএ দেওয়া একটি তােয়ালে আনিয়া দিলে জল হইতে তুলিয়া তােয়ালে জড়াইয়া খােকাকে হারান শােয়াইয়া দিল। নাড়ী দেখিয়া