পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৩৯

 একটু রঙ মিশিয়ে দেয়।

 কি রঙ দেয় মা? আলতার রঙ?

 দূর! আলতার রঙ বুঝি খেতে আছে? অন্য রঙ দেয়।

 কি রঙ?

 গোলাপ ফুলের রঙ বার করে নেয়।

 গোলাপ ফুলের রঙ কি কবে বার করে মা?

 শিউলী বোঁটার রঙ কি করে বার করে দেখিস নি?

 সেদ্ধ করে না?

 হ্যাঁ।

 তুমি আলতা পর কেন মা?

 পরতে হয় রে, নইলে লোকে নিন্দে করে যে।

 কেন?

 এ কেনর অন্ত থাকে না।

 বিধানের প্রকৃতির আর একটা অদ্ভুত দিক আছে, পশুপাখির প্রতি তার মমতা ও নির্মমতার সমন্বয়। কুকুর বিড়াল আর পাখিব ছানা পুষিতে সে যেমন ভালবাসে, এক এক সময় পোষা জীবগুলিকে সে তেমনি অকথ্য যন্ত্রণা দেয়। একবার সন্ধ্যার সমত ঝড় উঠিলে একটি বাচ্চা শালিখ পাখি বাড়ির বারান্দায় আসিয়া পড়িয়াছিল। বিধান ছানাটিকে কুড়াইয়া আনিয়াছিল। আঁচল দিয়া পালক মুছিয়া, লণ্ঠনের তাপে সেক দিয়া তাহাকে বাঁচাইয়াছিল শ্যামা। পরদিন খাঁচা আসিল। বিধান নাওয়া খাওয়া ভুলিয়া গেল। ক্ষুদ্র বন্দী জীবটি যেন তাহারই সম্মানীয় অতিথি। হরদম ছাতু ও জল সরববাহ করা হইতেছে, বিধানের দিন কাটিতেছে খাঁচার সামনে। কি তাহার গভীর মনোযোগ, কি ভালবাসা। অথচ কয়েকদিন পবর, এক দুপুরবেলা পাখিটিকে সে ঘাড় মটকাইয়া মারিয়া রাখিল। শ্যামা আসিয়া দেখে মরা পাখির ছানাটিকে আগলাইয়া বিধান যেন পুত্রশোকেই আকুল হইয়া কাঁদিতেছে।

 ও খোকা, কি করে মরল বাবা, কে মারলে?

 বিধান কথা বলে না, শুধু কাঁদে।