পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
জননী

বলিয়া চোরের মত, যে চোরকে কেহ চোর বলিয়া জানে না, সব সময় অত্যন্ত হীন একটা লজ্জাবােধ করিয়া সঙ্কুচিত হইয়া থাকিত।

 পরের মাসে শীতল মাহিনা ও কমিশনের টাকা আনিয়া দিল অর্ধেক, প্রথমে সে কিছু স্বীকার করিতে চাহিল না, তারপর কারণটা খুলিয়া বলিল। কমল ঘােষের কাছে শীতল সাতশাে টাকা ধার করিয়াছে, সুদ দিতে হইবে না, কিন্তু ছ'মাসের মধ্যে টাকাটা শােধ করিতে হইবে। সাতশাে টাকা! এত টাকা শীতল ধার করিতে গেল কেন?

 রাখালকে দিয়েছি।

 ঠাকুরজামাইকে ধার করে সাতশাে টাকা দিয়েছ? তােমার মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেছে কিনা বুঝিনে বাবু, কেন দিলে?

 শীতল ভয়ে ভয়ে বলিল, ছ'সাত মাস রাখালের চাকরী ছিল না শ্যামা, আশ্বিন মাসে বােনের বিয়েতে বড্ড দেনায় জড়িয়ে পড়েছে, হাত ধরে এমন করে টাকাটা চাইলে—

 শ্যামার মাথা ঘুরতেছিল। সাতশাে টাকা! রাখাল যে এবার চোরের মত বাস করিয়া গিয়াছে তাহার কারণ তবে এই? সে সত্যই তাহাদের টাকা চুরি করিয়া লইয়া গিয়াছে? টাকা সম্বন্ধে শীতলের দুর্বলতা রাখালের অজানা নয়, এবার সে তাহা কাজে লাগাইয়াছে। মন্দাকেও শ্যামা এবার চিনিতে পারে, অত যে মেলামেশা আমােদ-আহ্লাদ সব তাহার ছল। ওদিকে রাখাল যখন শীতলকে টাকার জন্য ভজাইতেছিল, মন্দা এদিকে তাহাকে নানা কৌশলে ভুলাইয়া রাখিয়াছিল সে যাহাতে টের পাইয়া বারণ করিতে না পারে। এতাে জানা কথা যে শীতল আর সে শীতল নাই, সে বারণ করিলে টাকা শীতল কখনাে রাখালকে দিত না।

 রাগে দুঃখে সারাদিন শ্যামা ছটফট করিল, যতবার রাখাল ও মন্দার হীন ষড়যন্ত্রের কথা আর টাকার অঙ্কটা সে মনে করিল গা যেন তাহার জ্বলিয়া যাইতে লাগিল। কত কষ্টের টাকা তাহার, শীতল তাে পাগল, কবে তাহার কমল প্রেসের চাকরী ঘুচিয়া যায় ঠিক নাই, দুটো টাকা জমানাে না থাকিলে ছেলেদের লইয়া তখন সে করিবে কি? শীতলকে সে অনেক জেরা করিল,—কবে টাকা দিয়েছ? রাখাল কবে টাকা ফেরত দেবে বলেছে? টাকার