পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
জননী

ডাকে। বলে, হ্যাঁগা, ঘুমুলে নাকি? ফুটফুটে জ্যোছনা উঠেছে দিব্যি, ছাতে যাবে একবারটি?

 শীতল বলে, আবার ছাতে কি জন্যে?—কিন্তু সে বিছানা ছাড়িয়া ওঠে।

 শ্যামা বলে, গিয়ে একটা বিড়ি ধরাও, আমি আসছি।

 রঙীন কাপড়খানা পরিয়া শ্যমা ছাদে যায়। বড় লজ্জা কবে শ্যামার—শীতলকে নয়, বিধানকে। ঘুম ভাঙ্গিয়া রাত দুপুরে তার পরণে রঙীন কাপড় দেখিলে, ও যা ছেলে—ওর কি আর বুঝিতে বাকি থাকিবে শীতলের মন ভুলানাের জন্যে সে সাজগােজ করিয়াছে? অথচ শীতল সখ করিয়া কাপড়খানা আনিয়া দিয়াছে, একবার না পরিলেই বা চলিবে কেন?

 শামা মাদুর লইয়া যায়। মাদুর পাতিয়া দুজনে বসে: চাঁদের আলােয় বসিয়া দুজনে দুটো একটা সাংসারিক কথা বলে, বেশি সময় থাকে চুপ করিয়া। বলার কি আর কথা আছে ছাই এ বয়সে! হ্যাঁ, শীতল শ্যামাকে একটু আদর করে। শীতলের স্পর্শ আর তেমন মোলায়েম নয়। কখনো যেন স্ত্রীলোকের সঙ্গ পায় নাই এমনি আনাড়ির মত আদর করে। শ্যামা দোষ দিবে কাকে, সেও তাে কম মােটা হয় নাই!

 তারপর একদিন শ্যামা সলজ্জ ভাবে বলে, কি কাণ্ড হয়েছে জান?

 শীতল শুনিয়া বলে, বটে নাকি!

 শ্যামা বলে, হ্যাঁ গাে, চোখ নেই তোমার? কি হবে বলত এবার, ছেলে না মেয়ে?

 মেয়ে।

 উঁহুঁ ছেলে।—বুকু বেঁচে থাক আমার, আর মেয়েতে কাজ নেই বাবু।

 বলিয়া শ্যামা হাসে। মশুর পরিপূর্ণ হাসি দেখিয়া কে বলিবে, শীতলের মত অপদার্থ মানুষ তাহার মুখে এ হাসি যােগাইয়াছে।