পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৮১

বেশি অনুগ্রহ দেখানো—কে বলিতে পার? মামা ভাবে, বুড়ো বয়সে দেশে ফিরিবার বাসনা তাহার কেন হইয়াছিল? আসিতে না আসিতে কি বিপদেই জড়াইয়া পড়িল। মুখে কিন্তু মামা অন্য কথা বলে বলে এমন উন্মাদ সংসারে থাকে? আমি এসেছিলাম বলে তো নইলে তুই স্ত্রীপুত্রকে কার কাছে ফেলে যেতি রে হতভাগা? একেবারে কাণ্ডজ্ঞান নেই? স্ত্রীপুত্রকে পরের ঘাড়ে ফেলে আপিসের টাকা চুরি করে মেয়ে নিয়ে তুই পালিয়ে গেলি?

 শ্যামাই শেষে বিরক্ত হইয়া বলে এখন আর ও কথা বলে লাভ কি হবে মামা? কি করতে হবে না হবে পরামর্শ করি এসো।

 অনেক বকম পরামর্শই তাহারা করে। মামা একবার প্রস্তাব করে যে শ্যামার কাছে কিছু যদি টাকা থাকে, হাজার দুই তিন, ওই টাকাটা কমলবাবুকে দিয়া এখনকার মত ঠাণ্ডা করা যায, পরে শীতল ফিরিয়া আসিলে যাহা হয় হইবে। শ্যামা বলে তাহার টাকা নাই, টাকা সে কোথায় পাইবে? তা ছাড়া শীতল যে ফিরিয়া আসিবে তার কি মানে আছে? তখন মামা বলে, বাড়িটা বিক্রি করিয়া কমলবাবুকে টাকাটা দিয়া দিলে কেমন হয়? শীতল তাহা হইলে পুলিসের হাত হইতে বাঁচে। শ্যামা বলে যে শীতল যদি ফাঁসিও যায় বাড়ি সে বিক্রয় করিতে দিবে না। এই কথা বলিয়া তাহার খেয়াল হয যে ইচ্ছা থাকিলেও বাড়ি সে বিক্রয় করিতে পারিবে না বাড়ি শীতলের নামে। শুনিয়া মামা একেবারে হতাশ হইয়া বলে যে তা হলেই সর্বনাশ, টাকাগুলি খবচ করিয়া শীতল ফিরিয়া আসিয়াই বাড়িটা বিক্রয় করিয়া নিশ্চয় কমলবাবুর টাকাটা দিয়া বাঁচিবার চেষ্টা করিবে। শ্যামাব মুখ শুকাইয়া যায় সে কাঁদিতে থাকে।

 পরামর্শ করিয়া কিছুই ঠিক করিতে পারা যায় না, বেশির ভাগ আরো বেশি বেশি বিপদের সম্ভাবনাগুলি আবিষ্কৃত হইতে থাকে।

 শেষে মামা এক সময় বলে শ্যামা সর্বনাশ করেছিস। আপিসের টাকা থেকে শীতল তোকে দিয়ে যায় নি হাজার টাকা?

 শ্যামা বলে, একথা জিজ্ঞেস করছ কেন মামা?

 মামা বলে, কেন করছি তুই তাব কি বুঝবি পলিসে বাড়ি সার্চ করবে