পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯০
জননী

সেইবার। আমার বাড়ি হলে কমলবাবু এতক্ষণ বাড়ি বিক্রি করে টাকা আদায় করে নিত।

 শ্যামার মনে হয় শীতলকে সে চিনিতে পারে নাই। মাথায় একটু ছিট আছে, ঝোঁকের মাথায় হঠাৎ যা তা করিয়া বসে, কিন্তু বুকখানা স্নেহ মমতায় ভরপুর।

 ঘণ্টা দুই পরে সাব ইনসপেক্টর রজনী ধর আসিলেন। ভারি অমায়িক লোক। হাসিয়া বলিলেন, না মশাই না, দেশে দেশে আপনাকে আমরা খুঁজে বেড়াইনি, যত বোকা ভাবেন আমাদের অত বোকা আমরা নই, বি-এ এম-এটা আমরাও তো পাশ করি? আপনার বাড়িটাতে শুধু একটু নজর রেখেছিলাম—আমি নই, আমি মশায় থানায় ঘুমোচ্ছিলাম—অন্য লোক। আপনি একদিন আসবেন তা জানতাম,—সবাই আসে, স্ত্রী পরিবারের মায়া বড় মায়া মশায়। টাকাগুলো আছে নাকি পকেটে? দেখি একবার হাতড়ে। না থাকে তো নেই, টাকার চেয়ে আপনাকেই আমাদের দরকার বেশি। আপনাকে পাওয়া আর দু’শোটি টাকা পাওয়া সমান কিনা। জানেন না বুঝি? আপনার জন্যে কমলবাবু যে দু’শো টাকা পুরস্কার জমা দিয়েছেন।—নইলে এই শীতের রাত্রে বিছানা ছেড়ে উঠে এসেও আপনার সঙ্গে এমন মিষ্টি মিষ্টি কথা কই?

 শ্যামার কান্না, ছেলেমেয়ের কান্না, সর্বসমেত পাঁচটি প্রাণীর কান্নার মধ্যে শীতলকে লইয়া সাব ইনসপেক্টর চলিয়া গেল।

 মামা বলিল, কাঁদিসনে শ্যামা, কাল জামিনে খালাস করে আনব। তারপর চুপি চুপি বলিল, কি মুখ্য দেখলি? টাকাগুলো পকেটে করে নিয়ে এসেছে! নিজেও গেলি টাকাও গেল, —গেল ত?