জন্ম ও মৃত্যু
১০৪
পারি? ভেবে দ্যাখো তা হ’লে আমি বদলাই নি, বদলে গিয়েছ তুমি হীরুদা।
—আচ্ছা কুমী, এতটা না বকে সামান্য দু’ কথায় শাদা উত্তর একটা দে না কেন? বকুনিতে আমি কি তোর সঙ্গে পারব?
—না, তা তুমি পারবে কেন? বকতে তুমি একটুও জানো না। হাঁ, হই।
—মন থেকে বলচিস্?
—আমার ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করচে হীরুদা, এতটা বদলে গিয়েচ তুমি? যাও—আমি তোমার কোনো কথার আর উত্তর দেবো না। তুমি না নিজের বুদ্ধির বড় অহঙ্কার করতে?
—কুমী, রাগ করিস্ নে। অনেক কাজের মধ্যে থেকে আমার সুক্ষ্ম বুদ্ধিটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যাক্, বাঁচলুম কুমী!
পায়েসটা খাও তোমার পায়ে পড়ি। আর বকুনিটা কিছুক্ষণের জন্য ক্ষান্ত রাখো। কিছু তোমার পেটে গেল না এই অনাছিষ্টি বকুনির জন্য।
কুমী পরদিন এসে বিছানা-বাক্স গুছিয়ে দিলে। ঘাট পর্যন্ত এসে ওদের নৌকোতে উঠিয়ে দিলে। নৌকো ছেড়ে যখন অনেকটা গিয়েছে তখনও কুমী ডাঙায় দাড়িয়ে আছে।
দু’পাড়ের নদীচর নির্জন! দুপুরের রৌজ আজ বড় প্রখর, আকাশ অদ্ভুত ধরনের নীল, মেঘলেশহীন। বন্যার জলে পাড়ের ছোট কালকাসুন্দি গাছের বন পর্যন্ত ডুবে গিয়েছে। কচুরিপানার বেগুনী ফুল চড়ার ধারে আটকে আছে। সেই সব বনজঙ্গলময় ডাঙ্গার পাশ দিয়ে চলেছে ওদের নৌকো। ঝোপের তলার ছায়ায় ডাহুক চরছে। বন্যার জলে নিমগ্ন আখের ক্ষেতের আখগাছগুলো স্রোতের বেগে থরথর কাঁপছে।