বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১১০

 ও বললে—আমার ছেলেবেলা থেকে সাধ যে, আমার লেখা কাগজে বেরোয়। যখন বড় বড় লেখকদের লেখা দেখতাম, আমার ইচ্ছে হত একদিন আমিও এই রকম লিখব। আমার এক ক্লাসফ্রেণ্ড ছিল কান্তি বসু—কলকাতায় তার সঙ্গে দেখা এই মাঘ মাসে। আমায় দেখালে “ভারতবর্ষে তার একটা গল্প বেরিয়েছে। মনে মনে বললুম, বা রে!” আমার এমন কষ্ট হ’ল, ওরা সব লেখক হ’য়ে গেল, ওদের লেখা ছাপা হচ্ছে, কত লোক পড়ছে, ভাবুন—কত নাম বেরুবে!

 সে খানিকক্ষণ জানালার বাইরে আকাশের দিকে কেমন একটা মুগ্ধ-আকুল সুদূর দৃষ্টিতে চেয়ে রইল, তারপর চোখ নামিয়ে বিষণ্ণ মুখে বললে—আর আমার কিছুই হ’ল না।

 ওর আন্তরিকতা ও আগ্রহ আমার বড় ভালো লাগল। একটু অন্য ধরনের ছেলে বটে—হয়তো বা একটু মাথা খারাপ আছে। ও যতক্ষণ বসেচে, আমি কেবল লক্ষ্য করচি ওর মুখের ভাবের নানা রকম পরিবর্তন। নির্ভরতার ভয়, শ্রদ্ধা, আশা, আগ্রহ, স্বপ্ন, বিষণ্ণতা, বিভিন্ন ভাব ওর মুখে কেমন চমৎকার ফুটে ওঠে। খুব সাধারণ ধরনের লোকের এ রকম হয় না। পাথর-গড়া মুখের মতো তাদের মুখ হয় দৃঢ়, অপরিবর্তনীয়—ভাব প্রবণতার বালাই তাদের নেই। ওকে উৎসাহ দেবার জন্যে বললাম—আপনি এর পরে নিশ্চয়ই ভালো লিখতে পারবেন। এরই মধ্যে বেশ লেখা বেরিয়েছে আপনার হাত থেকে। এখন আপনার তো বয়েস কম, সারা জীবন পড়ে রয়েছে আপনার সামনে—আমার তো মনে হয়, কালে আপনি একজন ভালো লেখক হবেন—আপনার লেখা পড়ে আমরা এক সময় আনন্দ পাব।