পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বড়বাবুর বাহাদুরি

 আপিসে মাঝে মাঝে নানা পার্টি আসিয়া গোলঞ্চ লতা ও গাছ-গাছড়া বিক্রি করিয়া যাইত। ইহাদের নাম লেখা আছে বটে, কিন্তু অনেকেরই ঠিকানা কিছু লেখা থাকে না। এখানে ছোট-খাটো কাজকর্ম সবই হয় নগদ—বড়বাবুর এসিষ্ট্যাণ্ট, সে সব পাওনাদারকে সাহেব তো দূরের কথা, বড় বাবুর কাছে পর্যন্ত যাইতে দেয় না।

 হরিপদ এবার নগু দালালের হাত দিয়া জিনিস না বেচিয়া নিজেই সরাসরি কোম্পানীর আপিসে লইয়া গিয়া নামাইয়াছিল।

 যে পাড়াগাঁয়ে হরিপদ থাকে, গাছ-গাছড়ার সেখানে অভাব নাই। নগু দালালের পরামর্শেই সে এই সব গাছ-গাছড়া সংগ্রহ করিতে আরম্ভ করে। তাহাকে সে সব চিনাইয়াছিল শান্তি কবিরাজ।

 মন পিছু দু’টাকা লরি ভাড়া দিয়া বার বার মাল আনিয়া পোষায় না। হরিপদ সেজন্য এক বছর ধরিয়া বিস্তর গাছপালা মজুদ করিতেছিল। নগু দালাল ইহার মধ্যে দু’তিনবার সন্ধান লইয়াছেও।

 —ওহে হরিপদ, মালগুলো এবার দেখচি তুমি পচাবে। আপাং শিমুলের শেকড়, শ্বেতপর্পটি এ সব ছ’মাসের বেশি থাকে না, পচে’ নষ্ট হয়ে যায়। তখন দু’খানা করেও বিক্রি হবে না। নিয়ে এসো হে, নিয়ে এসে ফেল কলকাতায়—। কিন্তু হরিপদ খুব কাঁচা ছেলে নয়।