৭
যদু হাজরা ও শিখিধ্বজ
তারপর কয়েক বছর কেটেছে। তখন আমি আরও একটু বড় হয়েছি—স্কুলে ভর্তি হয়েছি। যদু হাজরার কথা প্রায় এর ওর মুখে শুনি। যেখানেই যাত্রা দলের কথা ওঠে, সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করে যাত্রা দলের মধ্যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা যদু হাজরা।
আমি কিন্তু বহুদিন যাদু হাজরাকে আর দেখলুম না।
এর অনেক কারণ ছিল।
আমি দূরের শহরের স্কুল-বোর্ডিং-এ গেলুম।
মন গেল লেখাপড়ার দিকে, ধরাবাঁধা রুটীনের মধ্যে জীবনের মুক্ত গতি বন্ধ হ'য়ে পড়ল। এ্যালজেব্রার আঁক, জ্যামিতির এক্স্ট্রা, ইংরাজী ভাষার নেশা, ফুটবল, ডিবেটিং ক্লাব, খবরের কাগজ—জীবনের মধ্যে নানা পরিবর্তন এনে দিলে। ছেলেবেলার মতো যে যেখানে যাত্রার নাম শুনব সেখানেই দৌড়ে যাব—তা কে জানে চার ক্রোশ, কে জানে ছ’ ক্রোশ—এমন মন ক্রমে ধীরে ধীরে বদলে যেতে লাগল। ইচ্ছে হ’লেও হয়তো স্কুলের ছুটি থাকে না, স্কুলের ছুটি থাকলেও বোর্ডিং-এর সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট ছাড়তে চান না—নানা উৎপাত।
পাড়াগাঁয়ের ছেলে ছিলুম, থিয়েটার কাকে বলে জানতুম না। যে শহরে পড়তুম, সেখানে উকিল-মোক্তারদের একটা থিয়েটার ক্লাব ছিল, তারা একবার থিয়েটার করলেন, পালাটা ঠিক মনে নেই-বোধ হয় “প্রতাপাদিত্য”। ভাষা ও ঘটনার বিন্যাসে থিয়েটারের পালা আমাকে মুগ্ধ করল—ভাবলুম যাত্রা এর চেয়ে ঢের খারাপ জিনিস। প্লটের এমন বাঁধুনী তো যাত্রার পালাতে নেই? তারপর অনেকবার উকিলদের ক্লাবে থিয়েটার দেখলুম—ছেলেবেলার মন ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে,