পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১২২

 দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধারণা তাহার বদ্ধমূল হইতে লাগিল। আজকাল স্ত্রীর প্রতি ব্যবহারটা দিন দিন রুক্ষ হইয়া উঠিতেছে। সামান্য কথায় খিটখিট করে, সামান্য ব্যাপার লইয়া স্ত্রীকে দু’কথা শুনাইয়া দেয়। মনের মিলের জোড় ক্রমে অলক্ষিতে খুলিতে লাগিল। আশালতা ভাবিয়া কূল পায় না, তাহার অমন স্বামী কেন এমন হইয়া যাইতেছে দিন দিন? ক্রমে তাহার মনেও ভাঙন শুরু হইল। ভাবে এত হেনস্তা কিসের? কোন্ জিনিসটাতে আমার ত্রুটি হয়? উদয়াস্ত মুখে রক্ত উঠে খেটে মরি, সে কথা একবার বলা তো দূরের কথা, উল্টে আবার পান থেকে চুন খসলেই এই সব গাল-মন্দ, অপমান?

 গত মাসখানেক সেই আপিসের টাকাতে হাত পড়িয়াছে। এরই মধ্যে ত্রিশ চল্লিশ টাকা খরচ হইয়া গিয়াছে। আশালতা ভাবে—‘ওর শরীরটা খারাপ হয়ে গিয়েচে রোদে রোদে সাত গাঁয়ের বন-জঙ্গলে ঘুরে। ওকে একটু সারিয়ে তুলি।’ গত মাস হইতে আশালতা রাত্রে প্রায়ই লুচি ভাজিয়া স্বামীকে খাওয়ায়। মাঝে মাঝে ভালো খাবার-দাবার করে। একদিন বলিল—ওগো, তোমার পায়ের দিকে একবার নজর দাও। এক জোড়া জুতো কিনো দিকি ভালো দেখে। জলে-জলে পা হেজে পাকুই ধরে গেল যে!

 একদিন সন্ধ্যার পর হরিপদ খাইতে বসিয়াছে, আশালতা তাহার জন্য দুধ গরম করিয়া আনিতে গিয়াছে। হঠাৎ হরিপদ লুচি চিবাইতে চিবাইতে বেকাদায় জিভ কামড়াইয়া ফেলিয়া যন্ত্রণায় বলিয়া উঠিল—উঃ—

 ঠিক সেই সময় আশালতা দুধের বাটি লইয়া আসিয়া বলিল—