পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৩
বড়বাবুর বাহাদুরি 

কি হ’ল গা? হরিপদ বাঁ হাত দিয়া গলাটা চাপিয়া ধরিয়া খানিকক্ষণ চুপ করিয়া মুখ বিকৃত করিয়া বসিয়া রহিল, কোন কথা বলিল না।

 আশালতা পুনরায় উদ্বেগের সুরে বলিল—কি হয়েছে, হ্যাঁগা? অমন করে আছ কেন? হরিপদ সঙ্গে সঙ্গে রুক্ষসুরে চিৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল—হবে আর কি, যেদিন থেকে তুমি অলখ্যি ঘরে ঢুকেচ, সেদিন থেকে এ সংসারের ভাষ্যি নেই। শুধু শুধু নইলে গরুর বাছুরটাই বা মরে যাবে কেন, আর—বলিয়া লুচির থালা হাতের ঠেলায় সজোরে দশ হাত তফাতে ছিটকাইয়া ফেলিয়া হরিপদ উঠিয়া ঘরের বাহিরে চলিয়া গেল।

 আশালতা দুধের বাটি-হাতে আড়ষ্ট হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল।

 হরিপদ অনেক রাত্রে বাড়ি ফিরিল। আসিয়া দেখিল, স্ত্রী বারান্দায় চুপ করিয়া বসিয়া আছে। জিবের ব্যথা কমিয়া যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাহার মনে হইয়াছে—ছিঃ, অমন করে তখন বলাটা ভালো হয়নি—নাঃ, একটু বেশি বলা হয়ে গিয়েছে—তখন আর মাথার ঠিক ছিল না তো।—ছিঃ! ঘরে ঢুকিয়া স্ত্রীকে ওভাবে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া বলিল—‘নাও ওঠো, রাগ করেচ নাকি? খাওয়া-দাওয়া হয়েচে?’ আশালতা ঝরঝর করিয়া কাঁদিয়া ফেলিল, কোন কথা বলিল না।

 হরিপদ স্ত্রীর হাত ধরিয়া উঠাইতে গেল। আশালতা আঁচলে চোখ মুছিয়া বলিল, থাক্, বোসো এখানে, একটা কথা বলি।

 কি?

 দেখো, সে টাকা তুমি ফেরত দিয়ে এসো। যা খরচ হয়ে গিয়েছে, আমার চুড়ি ক’গাছা বন্ধক দিয়ে হোক, বেচে হোক,