পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৩১

অন্নপ্রাশন 

গিয়াছে। কি করিয়া জানিবে, ভিন গাঁয়ের লোক, তাতে এত ব্যস্ত কাজের বাড়িতে; সে খবর তাকে দেওয়ার গরজ কার?

 কেশব একবার নবীন সরকারকে গিয়া বলিবে—গোমস্তা মশায়, আমার খোকাটি মারা গিয়েছে আজ সকাল বেলা। ফুটফুটে খোকাটি! বড় কষ্ট দিয়ে গিয়েছে।

 নবীন সরকার নিশ্চয়ই আশ্চর্য হইয়া যাইবে। বল কি কেশব! তোমার ছেলে আজ সকালে মারা গিয়েছে, আর তুমি ছুটোছুটি করে কাজ করে বেড়ােচ্ছ। আহা-হা, তোমার ছেলে। আহা, তাই ত!

 কিন্তু কেউ কিছু জানে না। কেশব ত কাহাকেও কিছু বলিবে না।

 মাছ ওজন করিয়া লইবার পরে দুধ-দই আসিয়া উপস্থিত! তারপর আসিল বাজার হইতে হরি ময়রার ছেলে, দু’মন-আড়াই মন সন্দেশ ও আড়াই মন পান্তুয়া লইয়া। দই-সন্দেশ ওজন করিবার হিড়িকে কেশব সম্পূর্ণ অন্যমনস্ক হইয়া পড়িল। সপ বিছান, সামিয়ানা খাটান প্রভৃতি কাজ তদারক করিবার ভারও পড়িল তাহার উপর।

 ইতিমধ্যে সকলেই সব ভুলিয়া গেল, একটা বড় গ্রাম্য দলাদলির গোলমালের মধ্যে। সকলেই জানিত, আজ হারাণ চক্রবর্তীর বিধবা মেয়ের কথা এ সভায় উঠিবেই উঠিবে। সকলে প্রস্তুত হইয়াই আসিয়াছিল। প্রথমে কথাটা তুলিলেন নায়েব মশায়—তারপরে তুমুল তর্ক-বিতর্ক ও পরিশেষে ওপাড়ার কুমার চক্রবর্তী রাগ করিয়া চেঁচাইতে চেঁচাইতে কাজের বাড়ি ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন—অমন দলে আমি থাকি নে! যেখানে একটা বাঁধন নেই, বিচার নেই—সে সমাজ আবার সমাজ? যে খায়