জন্ম ও মৃত্যু
৮
বাজারে যাত্রা হ’ল বারোয়ারীর সময়ে, কলকাতার দল, কিন্তু তাতে আগেকার মতো আনন্দ পেলুম না।
তারপর কলকাতায় এলুম। তখন নতুন মতের অভিনয় সবে কলকাতায় শুরু হ’য়েছে। বড় বড় বহু বিখ্যাত নটদের অভিনয় দেখবার সুযোগ জীবনে এই প্রথম ঘটল, তাদের নানা পালাতে নানা অভিনয় দেখলুম,—বিলিতী ফিল্মে বিশ্ব-বিখ্যাত নটদের অভিনয় অনেকদিন ধরে দেখলুম—মানুষ ক্রমে ক্রমে বিজ্ঞ হয়, উকিল-মোক্তারদের প্রধান অভিনেতা গুরুদাস ঘোষ—যাকে এতকাল মনে মনে কত বড় বলে ভেবে এসেছি—এখন তার কথা ভাবলে আমার হাসি পায়।
আরও কয়েক বছর কেটে গেল। কলেজ থেকে বেরিয়ে চাকুরি করি। কলকাতার থিয়েটারের অভিনেতারাও তখন আমার কাছে পুরোনো ও একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে,—থিয়েটার দেখাই দিয়েছি ছেড়ে। ফিল্ম্ সম্বন্ধেও তাই। খুব নামজাদা অভিনেতা না থাকলে সে ছবি দেখতে যাইনে,—যাঁদের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হ’য়েছি একদিন—এখন তাদের অনেকের সম্বন্ধেই মত বদলেছি।
এই যখন অবস্থা, তখন কি একটা ছুটিতে বাড়ি গিয়ে শুনি দেশে বারোয়ারী। শুনলুম, ক'লকাতা থেকে বড় যাত্রার দল আসছে—দেড়শো টাকা এক রাত্রির জন্যে নিয়েছে, এমন দল নাকি এদেশে আর কখনও আসে নি। ভালো বিলিতী ফিল্ম্ই দেখিনে, থিয়েটার দেখাই ছেড়ে দিয়েছি ভালো লাগে না ব’লে—এ অবস্থায় রাত জেগে যাত্রা দেখবার যে বিন্দুমাত্র ইচ্ছাও মনে জাগবে না—একথা বলাই বাহুল্য। যাত্রা আবার কি দেখব। নিতান্ত বাজে জিনিস—কে কষ্ট করে এই গরমের মধ্যে লোকের ভিড়ে বসে যাত্রা দেখ্তে যাবে?