পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৭
অন্নপ্রাশন 

খোকা আজ সকালে···ও রকম ক’রে আমায় ডাকবেন না··· আমার মনটা আজ ভাল না···

 দলে দলে নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণেরা আসিতে আরম্ভ করিয়াছে নানা গ্রাম হইতে। এগারোখানা গাঁ লইয়া সমাজ, সমাজের সকলেই নিমন্ত্রিত। বড় বৈঠকখানায় লোক ধরিল না, শেষে লিচুতলায় প্রকাণ্ড সতরঞ্চ পাতিয়া দেওয়া হইল। আসরের মধ্যে দাঁড়াইয়া দেউলে সরাবপুরের বরদা বাঁড়ুয্যে মশায় বলিলেন—একটা কথা আমার আছে। এ গাঁয়ে হারাণ চক্কোত্তি সমাজে একঘরে, তাদের বাড়ির কারুর কি নেমন্তন্ন হয়েছে আজ কাজের বাড়িতে? যদি হয়ে থাকে বা তাদের বাড়ির কেউ যদি এ বাড়িতে আজ এসে থাকেন, তবে আমি অন্ততঃ দেউলে সরাবপুরের ব্রাহ্মণদের তরফ থেকে বলচি যে, আমরা এখানে কেউ জলস্পর্শ করব না।

 আরও দু’ পাঁচখানা গ্রামের লোকেরা সমস্বরে এ কথা সমর্থন করিল। অনেকে আবার হারাণ চক্রবর্তীর আসল ব্যাপারটা কি জানিতে চাহিল। ছেলে-ছোকরার দল না বুঝিয়া গোলমাল করিতে লাগিল।

 এ বাড়ির বৃদ্ধ কর্তা সান্ন্যাল মশায়ের ডাক পড়িল। তিনি কাজের বাড়িতে কোথাও ব্যস্ত ছিলেন, গোলমাল শুনিয়া সভায় আসিয়া দাঁড়াইলেন। এ গাঁয়ের সমাজ বড় গোলমেলে, তাহা তিনি জানিতেন। পান হইতে চুন খসিলেই এই তিনশো নিমন্ত্রিত ব্রাহ্মণ এখনই হৈ-চৈ বাধাইয়া তুলিবে, খাইব না বলিয়া শুভকার্য পণ্ড করিয়া দিয়া বাড়ি চলিয়া যাইবে। প্রাচীন, বিচক্ষণ ব্যক্তি সব, কিন্তু সামাজিক ঘোঁটের ব্যাপারে ইহাদের না আছে বিচার-বুদ্ধি, না আছে কাণ্ডজ্ঞান।