শুনিতে পান না। টাইফয়েড হইয়। অল্প বয়স হইতেই কান দুটি গিয়াছে। তিনি হাতজোড় করিয়া নিবেদন করিলেন, তাঁহার মেয়েকে তিনি ভালো রকমই জানেন, তার স্বভাবচরিত্র সৎ। যে ছেলেটিকে লইয়া এ কথা উঠিয়াছে, গাঙ্গুলীবাড়ির সেই ছেলেটি কলেজের পাস, উঁচু নজরে কারও দিকে চায় না। ছেলেবেলা হইতেই বিদ্যুতের সঙ্গে তার ভাইবোনের মতো মেশামেশি, এর মধ্যে কেউ যে কিছু দোষ ধরিতে পারে—ইত্যাদি।
ইহার উত্তরে বিরুদ্ধ দলের কর্তা কুমার চক্রবর্তী রাগিয়া উঠিয়া যাহা বলিলেন, তাহা আমাদের মনে আছে, কিন্তু সে সব কথা পাড়াগাঁয়ের দলাদলি-সভায় উচ্চারিত হইতে পারিলেও ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করিবার যোগ্য নয়।
অনেক করিয়াও হারাণ চক্রবর্তীর হিতাকাঙ্ক্ষী দল কিছু করিতে পারিল না। কুমার চক্রবর্তীর দলই প্রবল হইল। আসলে বিদ্যুৎ যে খুব ভালো মেয়ে, বিদ্যুতের মনটি বড় নরম, পাড়ার আপদে-বিপদে ডাকিলেই ছুটিয়া আসে এবং বুক দিয়া পড়িয়া উপকার করে, তাহার উপর সে ছেলেমানুষ, এখনও তত বুঝিবার বয়স হয় নাই, বৃদ্ধের দলের আসল যুক্তি এই। কিন্তু, এ সত্য কথা সভায় দাঁড়াইয়া বলা যায় না।
কুমার চক্রবর্তীর দলের লোকেরা বলিল—সেবার সুরেনের মেয়ের বিয়ের সময় আমরা তো ব’লে দিয়েছিলাম, বিদুৎ সুশীলদের বাড়ি যাতায়াত বা সুশীলের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করুক। এক বছর আমরা যদি দেখি, সে আমাদের কথা মেনে চলেছে, তবে আমরা তাদের দলে তুলে নেব—কিন্তু সে কি তা শুনেচে?