পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৭
তারানাথ তান্ত্রিকের গল্প 

যেন বললে—লাথিটা খুব লেগেছে না রে? তা রাগ করিস্ নে, কাল যাস্ আমার ওখানে। সকালে উঠেই আবার গেলাম। ও মা, স্বপ্ন-টপ্ন সব মিথ্যে, পাগলী আমায় দেখে মারমূর্তি হ’য়ে শশ্মানের একখানা পোড়া-কাঠ আমার দিকে ছুঁড়ে মারলে। আমিও তখন মরিয়া হয়েছি, বললাম—তুমি তবে রাত্রে আমায় বলতে গিয়েছিলে কেন স্বপ্নে? তুমিই ত আসতে বললে তাই এলাম।

 পাগলী খিলখিল ক’রে হেসে উঠল। তোকে বলতে গিয়েছিলাম স্বপ্নে। তোর মুণ্ডু চিবিয়ে খেতে গিয়েছিলাম। হি—হি—হি—যা বেরো—

 কেন জানি না, এই পাগলী আমাকে অদ্ভুত ভাবে আকৃষ্ট করেছে, আমি বুঝলাম তখনি সেখানে দাঁড়িয়ে। এ যতই আমাকে বাইরে তাড়িয়ে দেবার ভান করুক, আমার মনে হ’ল ভেতরে ভেতরে এ আমায় এক অজ্ঞাত শক্তির বলে টানছে।

 হঠাৎ সে বললে—বোস্ এখানে।

 আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দিলে, তার আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেবার ভঙ্গিটা যেন খুব রাজা-জমিদারের ঘরের কর্ত্রীর মতো—তার সে হুকুম পালন না ক’রে যে উপায় নেই।

 কাজেই বসতে হ’ল।

 সে বললে—কেন এখানে এসে এসে বিরক্ত করিস্, বল ত? তোর দ্বারা কি হবে, কিছু হবে না। তোর সংসারে এখনও পুরো ভোগ রয়েছে। আমি চুপ করেই থাকি। খানিকটা বাদে পাগলী বললে—আচ্ছা কিছু খাবি? আমার এখানে যখন এসেছিস্, তার ওপর আবার বামুন, তখন কিছু খাওয়ান দরকার। বল কি খাবি?