১৮১
ডাকগাড়ি
রাধা বলিল—ও রামুর মা, রামুর কোনো খবর পেলে?
জেলে-বৌ বলিল—কোথায় দিদিঠাকরুণ—আজ পাঁচ মাস ছেলে গিয়েছে, একখানা পত্তর নয়—টাকা পাঠানো চুলোয় যাক—তার টাকা পাঠাতে হবে না। আমি ধান ভেনে, ক্ষার কেচে, গতর খাটিয়ে যেমন চালাচ্চি, এমনি চালিয়ে যেতে পারলে বাঁচি। ছেলের রোজগার খেতে চাইনে, সে ভালো থাকুক, নিজের খরচ নিজে করুক, তাতেই আমি খুশি। কিন্তু বলো তো দিদিঠাকরুণ, একখানা চিঠি নেই আজ পাঁচ মাস, আমি কি করে ঘরে থাকি?
রামু লালমণিরহাটে রেলে কি একটা চাকরি পাইয়া গিয়াছে। মাকে একবার পাঁচটি টাকা পাঠাইয়াছিল—তারপর এখন লেখে যে, সামান্য মাইনেতে তাহার কুলায় না, মাকে এখন আর টাকা পাঠাইতে পারিবে না। মা যেন কষ্ট করিয়া পূজা পর্যন্ত কোনো রকমে চালাইয়া লয়! ছেলের কষ্ট হইবার ভয়ে মাও আর টাকা চায় না। কষ্টে-সৃষ্টেই চালায়।
রাধার জেলে-বৌকে ভালো লাগে বড়।
এমন ধরনের মেয়ে এ গ্রামে ব্রাহ্মণ কায়স্থের ঘরেও নাই। এত সুন্দর মন ওর, পরের উপকারে প্রাণ ঢালিয়া দিতে এমন লোক সত্যিই গাঁয়ে আর নাই। শুধু রাধাদের বলিয়া নয়, লোকের চিঁড়ে কুটিতে জেলে-বৌ, ধান ভানিতে জেলে-বৌ, যাহাদের বাড়িতে পুরুষ মানুষেরা বিদেশে থাকে, শুধু বাড়িতে মেয়েরা আছে—এক ক্রোশ দূরবর্তী বাজার হইতে তাদের হাট-বাজার করিয়া দিতে জেলে-বৌ, কুটুম্ব বাড়িতে তত্ত্বতাবাস পাঠাইতে কিংবা নব-বিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি যাইতে জেলে-বৌ—জেলে-বৌ না হইলে এ গাঁয়ের লোকের