পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
১৮২

চলে না। অথচ এ সবের জন্যে জেলে-বৌ কারো কাছে একটি পয়সা প্রত্যাশা করে না—পাড়ার পাঁচজনের বিনি পয়সায় বেগার খাটিয়া বেড়ানোই তার অভ্যাস।

 গত জ্যৈষ্ঠ মাসে রাধার মনে আছে—আমবাগানের পথ দিয়া সে ঘাটে যাইতেছে—জেলে-বৌ আম কুড়াইতেছে বাগানে।

 রাধা বলিল—রামুর মা, আম কুড়ুচ্চ? দেখি কোন্ কোন্ গাছের, ও গুয়োথলীর আম পেয়েছ যে দেখচি!···ও বাবা, ও তো বড় একটা পাওয়া যায় না। আমি কত খুঁজি, একটাও পাইনে একদিনও। তোমার ভাগ্যি ভালো। ভারি বোঁটা শক্ত আম, তলায় পড়েই না।

 অত মিষ্টি গাছের আম, আর পাওয়া অত শক্ত, মাত্র তিনটি আম পাইয়াছিল জেলে-বৌ, অমনি হাসিমুখে বলিল,—তা নিয়ে যান দিদিঠাকরুণ, আম ক’টা আপনি সেবা করবেন। দয়া ক’রে নিয়ে যান আপনি। জেলে-বৌএর গুণ আছে, অত সহজে ত্যাগ স্বীকার করিতে ওর জুড়ি নাই এ গাঁয়ে।

 রাধা আম লইয়াছিল এই জন্যে যে, না লইলে জেলে-বৌ ভাবিবে, ছোট জাতের দান বলিয়া ব্রাহ্মণের মেয়ে সকালবেলা গ্রহণ করিল না। লইয়া সে ভাবিল—জেলে-বৌএর আপন-পর জ্ঞান থাকতো, যদি এ গায়ে হাঙ্গামা পোয়াতে হ’ত তা হ’লে।

 রাধা বলিল—জেলে-বৌ, আমার সঙ্গে একবার শ্বশুরবাড়ি চল না? অনেক দিন কোথাও বেরুই নি, ভাবচি দিনকতক ঘুরে আসি।

 জেলে-বৌ বলিল—যান না দিদিঠাকরুণ। আপনাদের যাবার জায়গা আছে কেন যাবেন না। শ্বশুরবাড়ি যানও নি তো অনেকদিন। তাঁরা দেখলে খুশি হবেন।