পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৩
ডাকগাড়ি 

 সে বিষয়ে রাখার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। শাশুড়ী তাকে দু’চক্ষে দেখিতে পারে না, তা রাধার জানিতে বাকী নাই। তবুও যাইতে হইবে, তোরঙ্গ আর ক্যাশ বাক্সটা সেখানে ছাড়িয়া আসায় লাভ কি? সেগুলো আনা দরকার। অমন ভালো তোরঙ্গটা।

 পরদিন বাবা-মাকে কথাটা বলিতেই বাড়িতে একপালা ঝগড়া শুরু হইল। রাধার বাবার আদৌ মত নাই সেখানে মেয়ে পাঠাইতে, রাধার মা কিন্তু রাধার দিকে। দু’জনে এই লইয়া বাধিল ঘোরতর দ্বন্দ্ব।

 রাধা বাবাকে বলিল, আমি ঘরে আসব তো বলচি সাত দিনের মধ্যে। নবুকে সঙ্গে নিয়ে যাই—না থাকতে দেয়, আসা তো আমার হাতের মুঠোয়। একঘেয়ে ভালো লাগে না এখানে।

 রাধার বাবা বলিলেন—এ অপমান সাধ ক’রে কুড়ুবার কি দরকার তোর? তারা কি এই ছ’বছরের মধ্যে একখানা পত্তর দিয়ে খোঁজ নিয়েচে যে তুমি কেমন আছ?

 অনেক কষ্টে অবশেষে বাবাকে নিমরাজি গোছের করাইয়া ছোট ভাইকে সঙ্গে লইয়া রাধা আসিয়া গাংনাপুর স্টেশনে গাড়ি চাপিল।

 রেলগাড়িতে চাপিয়া রাধার মনে হইল সে মুক্তির স্বাদ পাইয়াছে বহুদিন পরে। কেবল বাবা মায়ের একঘেয়ে ঝগড়া অশান্তি, কেবল নাই নাই শুনিতে শুনিতে তাহার তরুণ মন অকালে প্রৌঢ়ত্বের দিকে চলিয়াছে। সংসারে আলো নাই, বাতাস নাই, এতটুকু আনন্দ নাই—শুধুই শোনো চাল নাই, কাঠ নাই, একাদশীর আটা কোথ। হইতে আসিবে, নবুর কাপড়