জমাইতে গেলে সুবি গভীর ঔদাস্যের সুরে বলিবে—হ্যাঁ, যাই রাধাদি। কত কাজ পড়ে রয়েছে, বিনুর সেই মোজা জোড়াটা বুনতে বুনতে ফেলে রেখেছি, সেটা সম্পুর্ণ শেষ করে ফেলি গিয়ে। বসো তুমি—মা’র সঙ্গে কথা বলো।
তার পর বেলা পড়িয়া যাইবে। রোয়াকে কাস্তে বঁটি পাতিয়া একরাশ বিচুলি কাটিতে হইবে, গরুকে জাব খাওয়াইতে। মাঠ হইতে গরু অবশ্য মা-ই আনে, কারণ এ সময়টা সে কাজে এত ব্যস্ত থাকে যে, নদীর ধারের মাঠ হইতে গরু আনিবার সময় তার বড় একটা হয় না। তারপর বাইরের বেড়ার গা হইতে শুকনো কাপড় তুলিতে হইবে, ঘর ঝাঁট দিতে হইবে, লণ্ঠনে তেল পুরিয়া কাঁচ মুছিয়া রাখিতে হইবে, গা ধুইয়া আসিতে হইবে, পাতকুয়া তলায় সাঁজ জ্বালিয়াই বাবার মিছরি মরিচ গরম করিয়া দিয়াই রাত্রের ভাত চড়াইতে হইবে। সকলের খাওয়া দাওয়া সারা হইলে সে নিজে এক মুঠা চালভাজা তেলনুন মাখিয়া এক ঘটি জল খাইয়া বাবার পায়ে বাতের তেল মালিশ করিতে বসিবে। এই সব সারিতে রাত সাড়ে দশটার গাড়ি গড় গড় করিয়া মাত্লার বিলের পুলের উপর দিয়া যাইবার শব্দ পাওয়া যাইবে।
তবে দিনের মতো ছুটি। এই চলিবে দিনের পর দিন, তিন শো ত্রিশ দিন।
হঠাৎ নবু জানালার বাহিরে হাত বাড়াইয়া আঙ্গুল দিয়া দেখাইয়া বলিল—উই রাণাঘাটের ইষ্টিশান দেখা যাচ্ছে দিদি—
রাধার চমক ভাঙিল।
সে মুখ রাড়াইয়া দেখিল, প্রকাণ্ড ট্রেণটা অজগর সাপের মতো বাঁকিয়া রেল স্টেশনের নিকটবর্তী হইতেছে। যেখানে