বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৫
অকারণ 

আমার দিকে একবার চেয়ে দেখলে। সেই পায়রার খোপের মতো ঘরটা, ছিটেবেড়ার দেওয়ালে মাটির লেপ, তার ওপরে পুরোনো খবরের কাগজ আঁটা, কাগজগুলো হলদে বিবর্ণ হয়ে গিয়েচে—দড়ির আলনায় ময়লা কাপড়-চোপড় ঝুলচে।

 মনটা আরও দমে গেল। কি ক’রে এরা এ থেকে আনন্দ পায়? কি ক’রে আছে? কি অর্থহীন অস্তিত্ব! কেন আছে? আচ্ছা, ও ছেলেটা বড় হয়ে কি হবে? ওই রকম মিস্ত্রী হবে তো, ওই রকমই খোলার ঘরে ছেলে বউ নিয়ে ওই ভাবেই মলিন, কুশ্রী, অন্ধকার, অর্থহীন জীবনের দিনগুলো একে একে কাটাতে কাটাতে এগিয়ে চলবে, ততোধিক দীন হীন মরণের দিকে। অথচ মা কত আগ্রহে খোকাকে বুকে আঁকড়ে আদর করছে, কত আশা, কত মধুর স্বপ্ন হয়তো—কিন্তু এখানেও আমার সন্দেহ এল। স্বপ্ন দেখবার মতো বুদ্ধিও বৌটির আছে কি? কল্পনা আছে? নিজেকে এমন অবস্থায় ভাবতে পারে যা বর্তমানে নেই কিন্তু ভবিষ্যতে হতে পারে ব’লে ওর বিশ্বাস? মনের গোপন সাধ-আশাকে মনে রূপ দিতে পারে? নিজের সঙ্কীর্ণ, অসুন্দর বর্তমানকে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের মধ্যে হারিয়ে ফেলতে পারে?

 বড় রাস্তার মোড়ে বইএর দোকানগুলো দেখে বেড়ালুম। রাশি রাশি পুরোনো বই, ম্যাগাজিন। অধিকাংশই বাজে। অলস অপরিণত মনের তৈরী জিনিস। চটকদার মলাটওয়ালা অসার বিলিতী নভেল, সিনেমার ম্যাগাজিন ইত্যাদি। অন্যদিন এখানে বেছে বেছে দেখি, যদি ভালো কিছু পাওয়া যায়। আজ আর বাছবার মতো ধৈর্য ছিল না। মনের আকাশের চেহারা আজ ঘসা পয়সার মতো, নীলিমার সৌন্দর্য তো নেই-ই,