পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
 জন্ম ও মৃত্যু
৩২

দ্যাও। ও হাবলা, এই তোর সেই সই-মা, চিনতে পেরিলি, হ্যাঁরে বোকা ছোঁড়া? গড় করলি নি যে সই-মাকে? নে, পায়ের ধুলো আর নিতি হবে না, এমনি গড় কর।

 পান খাইয়া সে আবার শুরু করিল, ঘরের কত ভাড়া দ্যাও, হ্যাঁ সই? তের টাকা? ও মা, ক’নে যাব। তা কি দরকার তোমার শহরে এত টাকা খরচ করে থাকবার, হ্যাঁ সই? দিব্যি তোমার ঘরডা বাড়িডা রয়েচে গেরামে। আম কাঁঠাল গাছগুলো দেখা অবানে নষ্ট হয়ে যাবে। ন্যাও সই, মেয়ে যেন তোমায় চাকুরি করে নিয়ে খাওয়াবে লেখাপড়া শিখে, হি হি—হি হি—বলিয়া সে হাসিয়া লুটাইয়া পড়ে আর কি!

 আমার শোবার ঘরের বাহিরের রোয়াকে তাহার হাসি ও বক্তৃতা চলিতেছে, তা-ও এমন উচ্চকণ্ঠে যে, কলিকাতা শহরে হইলে ফুটপাথে ভিড় জমাইয়া যাইত। আমি একে কাল রাত্রে মশার উপদ্রবে তেমন ঘুমাইতে পারি নাই, এমন বিপদও আসিয়া জুটিল ঠিক কিনা দুপুর বেলাতেই। ছোট বাসা, অন্য কোন ঘরও নাই যে সেখানে গিয়া ঘুমাই।

 —ও সই ছেলেডাকে একটু জল দ্যাও দিকিন্, অনেকক্ষণ থে খাবে বলেচে। ওর আবার লজ্জা দেখলে হয়ে আসে! জল চাবি তোর সই-মার কাছে, তার আর লজ্জা দেখ না ছেলের?

 আমার বোন জল আনিতে ঘরের মধ্যে ঢুকিলে সে চুপিচুপি তাহার ছেলেকে আশ্বাসের সুরে বলিতেছে শুনিলাম—তোর সই-মা কি তোরে এমনি জল দেবে? কিছু খাতি দেবে অখন দেখিস্। দেখি? পেটটা পড়ে রয়েছে, অ মোর বাপ, সেই সকালে দুটো পান্তা খেয়োলো, আহা। পাটালি হাটে বিক্রি