পাতা:জন্ম ও মৃত্যু - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রামশরণ দারোগার গল্প

 রামশরণবাবু আমাদের সান্ধ্য-আড্ডায় নিত্যই আসেন, কিন্তু কথাবার্তা বড় একটা বলেন না। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের কর্মচারী, জীবনে অনেক জিনিসই দেখেছেন, —আমাদের অনেকের চেয়ে বেশি দেখেছেন। কিন্তু তিনি এসেই একটা তাকিয়া আশ্রয় ক’রে সেই যে আড় হয়ে শুয়ে পড়েন, আর যতক্ষণ না আড্ডার শেষ লোকটি চলে যাবে— ততক্ষণ তিনি চোখ বুজে এবং নিজে নির্বাক থেকে অন্য সকলের কথা মন দিয়ে শোনেন।

 সেদিন সন্ধ্যা থেকেই মেয়েদের প্রেম ও তার মূল্য—এই ধরনের একটা আলোচনা চলছিল। এ সম্বন্ধে যার যা অভিজ্ঞতা সকলেই কোন-না-কোন ঘটনা বলছে। রামশরণবাবু তাকিয়া ঠেস দিয়ে শুয়ে চোখ বুজেই বলে উঠ্‌লেন, আমার চাকুরীজীবনে একটা ব্যাপার একবার ঘটেছিল, অনেকদিন হলেও এখনও ভুলিনি। আরও ভুলিনি এই জন্যে যে ব্যাপারটা আমার কাছে একটা সমস্যার মতো চিরকাল রয়ে গিয়েছে, যদিও কত জটিল সমস্যারই মীমাংসা করে বেড়িয়েছি সারা জীবন! বলি শুনুন ঘটনাটা।

 আমি তখন থাকি আলমপুর থানায়। কলকাতার অত কাছে, বড় শহরের উপকণ্ঠে, চুরি জুয়াচুরির আড্ডা বেশি—একথা পুলিশ-কর্মচারী মাত্রই জানেন। এক মাসের মধ্যে কলকাতা পুলিশ থেকে অন্ততঃ সাত বার জিজ্ঞেস করে পাঠাল—আমাদের